কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলাম ৪৬০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক

নুরুল ইসলাম ৪৬০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক

স্টাফ রিপোর্টার: ২০০১ সালে টেকনাফ স্থলবন্দরে দৈনিক চুক্তিভিত্তিক ১৩০ টাকায় কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি নিয়েছিলেন নুরুল ইসলাম। আট বছর পর ২০০৯ সালে সেই চাকরি ছেড়ে দেয়। তবে নিজের আস্থাভাজন আরেকজনকে ওই পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করে জড়িয়ে পড়ে দালালি সিন্ডিকেটে। মাত্র ১৩০ টাকা দৈনিক মজুরিতে কাজ করা নুরুল ইসলাম এখন ৪৬০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংকে ১৯টি অ্যাকাউন্ট। ঢাকায় ৬টি বাড়ি ও ১৩টি প্ল্লট এছাড়াও সাভার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, ভোলায় নামে-বেনামে ৩৭টি প্লট এবং বাগানবাড়ি রয়েছে। তার জাহাজ শিল্প ও ঢাকার নিকটবর্তী বিনোদন পার্কে বিনিয়োগ রয়েছে।

র‌্যাবের দাবি, টেকনাফ বন্দরে নিজের অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে চোরাকারবারি, শুল্ক ফাঁকি, অবৈধ পণ্য খালাস ও দালালির কৌশল রপ্ত করেন নুরুল ইসলাম। বন্দরে দালালির বিভিন্ন সিন্ডিকেট গড়ে অবৈধভাবে অর্জন করেছে সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকার বেশি সম্পদ। এছাড়াও নামে-বেনামে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে ১৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। দালালির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া টেকনাফ বন্দরের সাবেক চুক্তিভিত্তিক কম্পিউটার অপারেটর নুরুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সদর দফতরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একটি গোয়েন্দা সংস্থা ও র‌্যাবের যৌথ অভিযানে গত সোমবার মধ্যরাতে ঢাকা মহানগরীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মো. নুরুল ইসলামকে (৪১) গ্রেফতার করা হয়। নুরুল ইসলাম ভোলা সদরের পশ্চিম কানাই নগরের মো. আব্দুল মোতালেবের ছেলে। অভিযানে উদ্ধার করা হয় ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যমানের জাল নোট, মায়ানমারের ৩ লাখ ৮০ হাজার মূল্যমানের মুদ্রা, ৪ হাজার ৪শ’ পিস ইয়াবা এবং নগদ ২ লাখ ১ হাজার ১৬০ টাকা।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার নুরুল ইসলাম তার অপরাধ সংশ্লি্লষ্টতার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন খন্দকার আল মঈন। নুরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তিনি বলেন, সে ২০০১ সালে টেকনাফ স্থলবন্দরে দৈনিক চুক্তিভিত্তিক ১৩০ টাকা হারে কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি নেয়। বন্দরে কর্মরত থাকার সময়ে নিজের অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে চোরাকারবারি, শুল্ক ফাঁকি, অবৈধ পণ্য খালাস, দালালি ইত্যাদির কৌশল রপ্ত করে। একইসঙ্গে দালালির বিভিন্ন সিন্ডিকেটে যুক্ত হয়। পরে নিজেই সেই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে।
নুরুল ইসলাম ৪৬০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক
২০০৯ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আস্থাভাজন একজনকে একই পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করে। চাকরি ছেড়ে দিলেও দালালি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছে রেখে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। নুরুল ইসলাম টেকনাফ বন্দরকেন্দ্রিক দালাল সিন্ডিকেটের প্রধান। তার সিন্ডিকেটে ১০-১৫ সদস্য রয়েছে। যারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে দালালি কার্যক্রমগুলো করে থাকে। এই সিন্ডিকেটটি পণ্য খালাস, পরিবহণ সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পথে অবৈধ মালামাল খালাসে সক্রিয় ছিল। সিন্ডিকেটের সহায়তায় পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে কাঠ, শুঁটকি, বরইয়ের আচার, মাছ ইত্যাদির আড়ালে অবৈধ পণ্য নিয়ে আসত। চক্রটির সদস্যরা টেকনাফ বন্দর, ট্রাক স্ট্যান্ড, বন্দর লেবার ও জাহাজের আগমন-বহির্গমন নিয়ন্ত্রণ করত। গ্রেফতার নুরুলের সঙ্গে চিহ্নিত মাদক কারবারিদের যোগসাজশ ছিল বলেও জানা গেছে। অবৈধ পণ্যের কারবারের জন্য হুন্ডি সিন্ডিকেটের সঙ্গে সমন্বয় এবং চতুরতার সঙ্গে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েস কারসাজি করত নুরুল ইসলাম। অবৈধ আয়ের উৎসকে ধামাচাপা দিতে এমএস আল নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ, এমএস মিফতাউল এন্টারপ্রাইজ, এমএস আলকা এন্টারপ্রাইজ, আলকা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড এবং এমএস কানিজ এন্টারপ্রাইজ নামে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে সে। দালালি ও অবৈধ কার্যক্রমে অর্জিত অর্থে ঢাকা শহরে ৬টি বাড়ি ও ১৩টি প্ল্লট কিনেছে। এছাড়াও সাভার, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, ভোলাসহ বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে ৩৭টি জায়গা, প্ল্লট, বাগানবাড়ি রয়েছে। অবৈধভাবে তার অর্জিত সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪৬০ কোটি টাকা। নামে-বেনামে তার বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ১৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। বর্তমানে নুরুল ইসলাম জাহাজ শিল্প ও ঢাকার নিকটবর্তী বিনোদন পার্কে বিনিয়োগ রয়েছে বলেও জানা গেছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার আল মঈন বলেন, নুরুল ইসলামের সঙ্গে কারবারিদের ইয়াবা বেচাকেনার তথ্যও আমরা পেয়েছি। তার ঢাকার বাসা থেকে ইয়াবাও জব্দ করা হয়েছে। কক্সবাজার ও টেকনাফকেন্দ্রিক মাদক কারবারিদের সঙ্গে সখ্যতা রয়েছে। আমদানি-রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও তার ছিল সখ্যতা। কম্পিউটার অপারেটরের পদে থাকার সময় আমদানি-রফতানিকারক দুটি বেনামি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে বিপুল অর্থ হাতিয়েছে। চাকরি ছেড়ে দিয়ে ফুলটাইম দালালির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া অর্থের ব্যবহার বৈধ করতে গড়ে তোলে ৫টি প্রতিষ্ঠান। সরকার দলীয় কোনো পদ-পদবি না থাকলেও সখ্যতার ভিত্তিতে দালালির কাজ করত সে। তবে গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতেই এই প্রথম র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় নুরুল।

জাল টাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে কমান্ডার আল মঈন বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশকেন্দ্রিক বাণিজ্য করার সুবাদে সে দেশের দালালদের সঙ্গেও তার যোগাযোগ ছিল। সে দেশের দালালদের মাধ্যমে জাল টাকার লেনদেন করত।

Post a Comment

Previous Post Next Post