স্কুলের সম্পদ লোপাট করে কোটিপতির তালিকায় দুর্নীতিবাজ শিক্ষক কুষ্টিয়ার খলিলুর!

স্কুলের সম্পদ লোপাট করে কোটিপতির তালিকায়

শিক্ষক খলিলুর তার স্ত্রী বিলকিস রহমানের বিরুদ্ধে দুদক’র মামলা

কুষ্টিয়া থেকে শরিফ মাহমুদ :   স্কুলের সম্পদ লোপাট করে কোটিপতি শিড়্গকের তালিকায় এখন কুষ্টিয়ার খলিলুর রহমান (৫৭)। তিনি অবৈধ ভাবে সম্পদ এবং টাকা কামিয়ে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে উঠে এসেছে। মানুষ গড়ার ভন্ড কারিগর খ্যাত এই দুর্নীতিবাজ,কুষ্টিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন। স্কুলের সম্পত্তি আত্মসাৎ ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তিনি ও তার স্ত্রী বিলকিস রহমানের (৪৭) বিরম্নদ্ধে দুদক পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। গত সোমবার (৮ মার্চ) বিকেলে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) তহিদুল ইসলামের আদালতে মামলা দুটি দায়ের করা হয়।
দুদকের কুষ্টিয়া জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জাকারিয়া স্বাক্ষরিত এজাহারটি আদালতে দাখিল করেন দুদকের কৌশুলী অ্যাডভোকেট আল-মুজাহিদ মিঠু।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালের ৮ অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ১৮ আগষ্ট পর্যনত্ম কুষ্টিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমানের স্ত্রী বিলকিস রহমান (৪৭) জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকা আহরণ করেছেন। দুদকের তদনেত্ম তিনি এ টাকার উৎসের বিষয়ে কোনো সদুত্তোর দিতে পারেননি। একইভাবে প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১৮ আগষ্ট পর্যনত্ম ৫২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা আয়ের বৈধ কোনো উৎস দেখাতে পারেননি।
স’ানীয় বাসিন্দা ও কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডা: এর পরিচালক এসএম কাদরী শাকিল বলেন, অনেক দেরিতে হলেও দুদকের এই পদক্ষেপে আমি খুশি, তবে দুদক যে কেবল কোটি টাকার সম্পত্তির হিসেব দিচ্ছেন, সেই পরিমানটাও আরও নিবিড় ভাবে প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠা দরকার। আমার মনে হয় এই পরিমানটা আরও অধিক হওয়ার কথা। যাই হোক সঠিক তদনত্ম ও দৃষ্টানত্ম মূলক বিচারসহ বিদ্যালয়টিকে রক্ষার দাবি করছি।
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চিকিৎসক নেতা ডা: আমিনুল হক রতন তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, এতোদিন ধরে আমাদের চোখের সামনে তিল তিল করে বিদ্যালয়টির অসিত্মত্ব বিলিন হয়ে যাচ্ছিল, আমরা অনেকেই দেখেছি, কিন’ কার্যত কেউই মুখ খুলে কিছু বলতে পারিনি। এই প্রতিষ্ঠানটি এখন কিছু স্বার্থন্বেষী প্রভাবশালী মহলের অর্থ আয়ের ক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে। দুদক এতোদিন পর মামলাটি করলেও আমি বলতে চাই, এই প্রতিষ্ঠানটিকে লুটপাট করে এর অসিত্মত্বকে যারা বিপন্নের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে তাদের সকলেও মুখোস উন্মোচিত করার দাবিসহ ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটি তার যথার্থ প্রান ফিরে পায় সেই দাবি করছি। আমরা শহরবাসী জানতে চাই প্রকৃত অর্থে প্রতিষ্ঠানটির কি পরিমান সম্পদ লুটপাট হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান।
দুদকের মামলা সংক্রানত্ম বিষয়ে জানতে চেয়ে কুষ্টিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমানের মুঠোফোনে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস’্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: একে এম মুনির বলেন, দুদকের মামলার বিষয়ে আমি শুনেছি। এটা প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত বিষয়ে সাথে সম্পৃক্ত। স্কুলের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। তাছাড়া দুদক যে মামলা করেছে তার মেরিট খুবই দুর্বল। এ মামলায় শেষ পর্যনত্ম কিছুই হবে না।
এলাকার সচেতন মহলের অভিযোগ, কুষ্টিয়া হাই স্কুলের মার্কেট নির্মাণের মহোৎসব চলছে । দোকান ঘরের পজিশন বিক্রির মাধ্যমে দখল হয়ে যাচ্ছে জমি। ছোট হয়ে আসছে দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া হাইস্কুল। আদালতের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে গর্ভনিং বডি গঠন স’গিত থাকলেও থেমে নেই মার্কেট নির্মান। ৫ শতাধিক দোকান ঘরের পজিশন বিক্রি করেও অভাব মিটছেনা স্কুল কর্তৃপক্ষের। পজিশন কিনে মানুষ ফ্লাট বাড়ী থেকে শুরম্ন করে সব ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। আসেত্ম আসেত্ম ছোট হয়ে আসছে খেলার মাঠ। আবারো নতুন করে শুরম্ন হয়েছে নির্মাণ কাজ। স্কুলটির পশ্চিম পাশে ৮ হাজার স্কয়ার ফিট মার্কেটের নীচ তলার ছাদ ঢালাই শেষ করে দোতলার কাজে হাত দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে পজিশন বিক্রিও শেষ। এখানে ১০বাই ১৫ ফুটের দোকান প্রতি দাম ধরেছে নূন্যতম ১০ লাখ টাকা। আবার দক্ষিণ দিকের পুকুর পাড়ে প্রায় ২হাজার স্কয়ার ফুট মার্কেটের ছাদ ঢালাই সম্পন্ন করেছে। এখানে নীচ তলায় প্রতিটি দোকানের পজিশন বিক্রি হয়েছে ১০/১২ লাখ টাকায়।এই বিদ্যালয়ে নতুন নতুন স্‌হানে মার্কেট নির্মাণ ও ছাদ বিক্রির খবর কুষ্টিয়ার মানুষের মুখে মুখে। কুষ্টিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে খলিলুর রহমান যোগদানের পর থেকেই এ কর্মযঞ্জ শুরম্ন হয়েছে। তিনি অল্প দিনেই প্রিন্টিং প্রেস,গাড়ী, বাড়ী ফ্লাটসহ প্রচুর সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। স্কুল পরিচালনা কমিটি, রাজনীতিবিদসহ প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করেই এসব কাজ চালিয়ে আসছেন তিনি।
হঠাৎ কুষ্টিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান দম্পত্তির বিরম্নদ্ধে দুদকের মামলা” টক অব দ্যা টাউন”এ পরিনত হয়েছে। বিশেষ জজ আদালতে খলিলুর রহমানের স্ত্রী বিলকিস রহমানের বিরম্নদ্ধে ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার ৫শত ৩৪ টাকার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পত্তি অর্জন ও দখলে রাখার অপরাধে মামলা হয়েছে। যার নম্বর ৭, তারিখ ৮/৩/২০২১খ্রীঃ। একই অপরাধে খলিলুর রহমানের বিরম্নদ্ধে ৫২ লাখ ৫৫ হাজার ১শত ৬৯ টাকার মামলা হয়েছে। যার নম্বর ৮, তারিখ ৮/৩/২০২১খ্রীঃ। মামলা দুটি দূর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইন ২০০৪ সালের ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা শাসিত্ম যোগ্য অপরাধ।
উলেস্নখ্য, ১৮৬১ সালে কুষ্টিয়া শহরের প্রাণ কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত হয় কুষ্টিয়া ইউনাইটেড হাই স্কুল। প্রায় ৮ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি এক সময় শহরের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। এদিকে কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রের ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতকোটি টাকার সম্পদ প্রকাশ্যে দিবালোকে প্রভাবশলী মহলের ইন্দনে লুটপাট ও আত্মসাতের ঘটনায় এতোদিন মুখ খুলতে পারেনি শহরবাসী।

আত্মহত্যা করলেন কুষ্টিয়ার সেই ফুড ডেলিভারি গার্ল

কুষ্টিয়া থেকে শরিফ মাহমুদ : না ফেরার দেশে চলে গেলেন কুষ্টিয়ার ফুড ডেলিভারি গার্ল (খাদ্য সরবরাহকারী) কলেজ ছাত্রী রজনী অধিকারী (১৯)। সোমবার (৮ মার্চ) নারী দিবসের দিনই রাত ১১টায় গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত কবির রজনীর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
পারিবারের দাবি, বন্ধুর ওপর অভিমান করে রজনী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।
রজনী অধিকারী কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া এলাকার ৯ নম্বর পলানবক্স এলাকার অশোক অধিকারীর মেয়ে। তিনি খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ফুড পান্ডার কুষ্টিয়া জেলার একমাত্র এবং বাংলাদেশের হাতেগোনা সাত-আট জন নারী খাদ্য সরবরাহকারীর মধ্যে একজন ছিলেন।
২০১৮ সালে কুষ্টিয়া হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন রজনী। বর্তমানে কুষ্টিয়া শহরের আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ডিপেস্নামা ইন কম্পিউটার বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
নিহতের বাবা অশোক অধিকারী জানান, রজনী খুব রাগী এবং অভিমানী ছিল। বন্ধুর ওপর অভিমান করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
ফুড পান্ডার কুষ্টিয়া অফিসের আঞ্চলিক ব্যবস’াপক ফজলে রাব্বী জানান, রজনী খুব বিনয়ী ছিলেন। মন দিয়ে কাজ করতেন। অল্প দিনেই তিনি গ্রাহকদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
রজনীর বান্ধবীরা জানান, রজনী খুব জেদি ছিল। যখন তখন মান অভিমান করে হাত কাটতো ও না খেয়ে থাকতো।
বান্ধবীদের দাবি, রাজবাড়ী জেলায় থাকা তার এক বন্ধুর ওপর অভিমান করে সে আত্মহত্যা করেছে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত কবির জানান, মঙ্গলবার সকালে রজনীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদনেত্মর জন্য ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post