বিক্ষোভে উত্তাল মায়ানমার

বিক্ষোভে উত্তাল মায়ানমার

Kbdnews ডেস্ক :   নির্বাচিত নেতা অং সান সু চির মুক্তি আর গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে মায়ানমারে ক্রমেই জোরালো হচ্ছে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ। গত সপ্তাহের সোমবার মায়ানমারের সামরিক বাহিনী এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। গত নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী দল এনএলডির নেতা অং সান সু চিসহ প্রেসিডেন্ট ও সরকারের মন্ত্রীদের আটক করে রেখেছে সামরিক জান্তা সরকার। এরপর থেকে শুরু হয় আন্দোলন। গত শনিবার থেকে টানা আন্দোলন চলছে। গতকাল সোমবার টানা তৃতীয় দিনের মতো আন্দোলনে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছে ইয়াঙ্গুন আর মান্দালয়ে।

বিক্ষোভে উত্তাল মায়ানমার
মায়ানমার দেশজুড়ে টানা ধর্মঘটে নেপিদোতে বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্যবহার হয়েছে পুলিশের জল কামান। জোরালো হতে থাকা বিক্ষোভে চাপ বাড়ছে ক্ষমতা দখলকারী সেনা সরকারের ওপর। ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার পরদিনই তা আংশিকভাবে সচল করতে বাধ্য হয়েছে সেনা সরকার। জানা গেছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে মায়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। এদিন অভিযান চালিয়ে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি এবং ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আটক করা হয়। দেশজুড়ে ঘোষণা করা হয় এক বছরের জরুরি অবস্থা। অপরদিকে সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে মায়ানমারে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন সু চি সমর্থকরা। এতে শামিল হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। অব্যাহত রয়েছে বিভিন্ন আন্দোলন-কর্মসূচি। বিক্ষোভ ঠেকাতে প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং পরবর্তীতে গত শনিবার ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। তবুও ঠেকানো যাচ্ছে না আন্দোলন। আন্দোলনকারী কিয়াও জেয়ার উ বলেন, লোকজন যখন শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছিলেন তখন কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই দুটি জল কামান তাদের দিকে পানি ছোড়ে। গতকাল সোমবার বিকেলে লোকজনের জড়ো হওয়া অব্যাহত থাকলেও পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত রয়েছে; কিন্তু তারপরও জল কামানগুলো সরানো হয়নি। তবে বিক্ষোভে আর কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।
বিক্ষোভে উত্তাল মায়ানমার
২৮ বছরের গার্মেন্ট শ্রমিক নিন থাজিন বলেন, আজকে (সোমবার) একটি কাজের দিন। কিন্তু আমরা কাজে যাব না এমনকি আমাদের বেতন কাটা হলেও না। এদিকে বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল সোমবার হাজার হাজার জনতা ইয়াঙ্গুনের রাস্তায় জড়ো হয়েছেন। ‘স্বৈরাচারকে না বলো’ ও ‘আমরা গণতন্ত্র চাই’ লেখা খচিত ব্যানার হাতে তারা প্রতিবাদ করছেন। সু চির দল এনএলডির লাল ব্যানারের পাশাপাশি বিভিন্ন রঙের বৌদ্ধ পতাকা তারা সঙ্গে নিয়েছেন। চাকরিজীবীদের কাজ থেকে ইস্তফা শুরু হয় গত সপ্তাহ থেকে। প্রথমে শুরু করেন চিকিৎসকরা, পরে শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারীরাও এতে যোগ দিয়েছেন। সপ্তাহের শেষে এই অসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করে। বিক্ষোভ দমনের উদ্দেশে গত শনিবার সামরিক সরকার দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়। তবে রোববারই সংযোগ ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় অসন্তোষ আরো বেড়ে গেছে।

অপরদিকে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি’র প্রতিবেদনে জানা গেছে, গত সপ্তাহে অভ্যুত্থানের পর সবচেয়ে বড় বিরোধিতার মুখে পড়েছে মায়ানমারের জেনারেলরা। গতকাল সোমবার দেশজুড়ে বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারী সমবেত হয়ে ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির মুক্তি দাবি করেছেন। দেশজুড়ে বিক্ষোভ নিরসন করতে জান্তা সরকার এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী বলপ্রয়োগ থেকে বিরত রয়েছে। তবে দাঙ্গা পুলিশের ওপর চাপ বাড়তে থাকায় গতকাল সোমবার রাজধানী নেপিদোর রাজপথে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে ছত্রভঙ্গ করতে ব্যবহার হয়েছে জল কামান।

তবে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে বিক্ষোভকারীরা নিজেদের চোখ ডলছেন আর একে অপরকে সাহায্য করছেন। তবে অন্যান্য শহরগুলোতে এখনো কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। বেশ কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে, বিপুল সংখ্যক বিক্ষোভকারী প্লাকার্ড হাতে নিয়ে এবং সস্নোগান দিয়ে রাজপথে সেনা শাসনের প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
বিক্ষোভে উত্তাল মায়ানমার
ইন্টারনেট পর্যবেক্ষক সার্ভিস নেটবস্নক এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে, গত রোববার স্থানীয় সময় বেলা দুইটা থেকে ইন্টারনেট সেবা আংশিকভাবে সচল হতে শুরু করেছে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার এখনো বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে মোবাইল ফোনের গ্রাহকেরা ইন্টারনেট ডাটা এবং ওয়াই ফাই ব্যবহার করতে পারছেন।

গত সপ্তাহের অভ্যুত্থানের পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন সেনা শাসকেরা। ব্যাপক প্রতিবাদ সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী বলপ্রয়োগ থেকে বিরত রয়েছে সেনা সরকার। তবে বিক্ষোভ থামাতে বল প্রয়োগ করতে দাঙ্গা পুলিশের ওপর ক্রমেই বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। তার জেরেই গতকাল সোমবার বিক্ষোভকারীদের ওপর জল কামান প্রয়োগ হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে ভিক্ষুদের বিক্ষোভের পর এটিই মায়ানমারের সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভ। সে বছর ভিক্ষুদের কঠোরভাবে দমন করেছিল দেশটির তৎকালীন সামরিক জান্তা।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post