বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন মহলের উচ্চব্যয়ের সমালোচনা বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল উন্নয়নের দেশ বাংলাদেশ।

বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন মহলের উচ্চব্যয়ের সমালোচনা

KBDNEWS / হেলালউদ্দিন  হিলু  : বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল উন্নয়নের দেশ বাংলাদেশ। সড়ক ও রেলপথ নির্মাণে ইউরোপ, আমেরিকা, চীন এমনকি প্রতিবেশী দেশ থেকেও বাংলাদেশে ব্যয় অনেক বেশি। এ জন্য লুটপাট, অনিয়ম ও দুর্নীতি বা সিস্টেম লসকে সমালোচকরা দায়ী করে থাকেন। বাংলাদেশে চুরি বা ডাকাতি হয়। এমনকি পুকুর চুরিও হয়। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে যে চুরি হয়েছে সেটাকে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেই এক সময় বলেছিলেন এটা সাগর চুরি। নির্মাণ কাজে, বিশেষ করে সেতু, কালভার্ট ইত্যাদি নির্মাণে বাংলাদেশে যা খরচ হয় পৃথিবীর কোনো দেশে এত খরচ হয় না। প্রকল্প ব্যয়ে বিশ্বরেকর্ড করে ফেলার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন যেন এ দেশের সরকারি কর্মকর্তারা।
তবে বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অতিরিক্ত ব্যয়ের জন্য বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান এবং জমির দাম বিশ্বের সবচেয়ে বেশি হওয়াকে দায়ী করেছেন। ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশের যেখানে অবস্থান, সেখানে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে সড়ক ও রেলপথ তৈরির ক্ষেত্রে অন্য সবার চেয়ে বেশি টাকার প্রয়োজন হয়। শত শত নদীবেষ্টিত ব-দ্বীপ আকৃতির পলিমাটির এ দেশের উপরে হিমালয় পর্বতমালা, গারো পাহাড়, আসাম ও মেঘালয়ের পাহাড় শেষ হয়েছে একেবারে বাংলাদেশের সীমান্তে এসে। ইউরোপ, আমেরিকা, চীন বা ভারতের ভূমির গঠন আর বাংলাদেশের ভূমির গঠন এক নয়। ওইসব দেশে সড়কপথ ও রেলপথ তৈরিতে তেমন কোনো মাটি ভরাটের কাজ থাকে না। প্রয়োজন হয় না সয়েল টেস্ট ও সয়েল ট্রিটমেন্টের মতো ব্যয়বহুল কাজেরও। আমাদের দেশে রাস্তা তৈরি করতে সয়েল টেস্টের প্রয়োজন হয়, সয়েল ট্রিটমেন্টেরও প্রয়োজন হয়। এরপর ইট, বালু, পাথর দিয়ে ১৫ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত ভূমি উঁচু করতে হয় ধাপে ধাপে। কোথাও কোথাও এক কিলোমিটারের মধ্যে ব্রিজ ও কালভার্ট তৈরি করতে হয় একাধিক। এসব খরচ অন্য কোনো দেশে নেই। কোথাও রাস্তার উচ্চতাও গড়ে ১৫ ফুট উঁচু হয় না। আমাদের বেশিরভাগ সড়ক ও রেলপথই বন্যাপ্রবণ এলাকা, প্লাবন ভূমি ও বিলের মধ্য দিয়ে তৈরি। ফলে আমাদের স্থায়িত্বের কথা চিন্তা করতে হয়।

টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে পার কিলোমিটার রোড কনস্ট্রাকশন ব্যয় এই মুহূর্তে পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। এই ব্যয় প্রায় ৬০ কোটি টাকার কাছাকাছি। যা ভারতে প্রায় ১২ বা ১৩ কোটি। এশিয়া এবং ওয়ার্ল্ড এভারেজ তার চেয়ে কম।

অর্থনীতিবিদ মাসরুর রিয়াজ বলেন, এই ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন পর্যায়ে সাড়ে ৮ থেকে শুরু করে প্রায় ২৭ শতাংশ পর্যন্ত মোট বাজেটের অর্থ অপচয় হয় দুর্নীতির মাধ্যমে।

২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দশ বছরে একেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া অনুশাসন পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যয় ও মেয়াদ যৌক্তিক করতে তিনি বারবার তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু দলীয় প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্য আর বাস্তবায়ন অদক্ষতায় অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।

অর্থনীতিবিদ মাসরুর রিয়াজ বলেন, আমাদের সমপ্রতি গবেষণায় দেখা গেছে এর অন্যতম কারণ হচ্ছে যে, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী মহলের অনিয়মের মাধ্যমে কার্যাদেশ বিক্রয় করা।

টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যখন প্রজেক্ট ডেভেলপমেন্ট করা হয় তখন প্রজেক্ট ফিজিবিলিটি বা ‘প্রজেক্ট প্ল্যান’ এখানে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। প্রজেক্টের মনিটরিংয়ে ঘাটতি রয়েছে।

অক্টোবর পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন হয়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ, যে গতি গেলো চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ১১ শতাংশ।

এবার এক কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়নে ৮৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা খরচ করবে সরকার। এমনই অস্বাভাবিক ব্যয়ের প্রস্তাবনা দিয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় তোলা হচ্ছে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি। সাড়ে ৪৮ কিলোমিটারের মহাসড়কটির উন্নয়নে মোট ব্যয় হবে চার হাজার ১শ ৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

অথচ মাত্র কিছুদিন আগেই হাওড়ের মধ্যে চালু হওয়া ইটনা-মিঠামইন-অস্টগ্রামের সাড়ে ২৯ কিলোমিটারের ‘অল ওয়েদার রোড’ নির্মাণেও কিলোমিটার প্রতি ব্যয় হয়েছে ত্রিশ কোটি টাকারও কম। সে হিসেবেও যশোর ঝিনাইদহ মহাসড়ক উন্নয়নে ব্যয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় তিনগুণ বেশি।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় দেখা যায়, ৪৮ দশমিক ৫ কিলোমিটারের মহাসড়কটি সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনে রূপান্তরিত করে এশিয়ান হাইওয়ে, সার্ক হাইওয়ে করিডর, বিমসটেক রোড করিডর ও সাউথ এশিয়ান সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো অপারেশন-সাসেক রোড করিডরের সঙ্গে উপ-আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ সহজ করতেই গ্রহণ করা হয়েছে প্রকল্পটি।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ১৫১ দশমিক ০০৪ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ, ৬৩ দশমিক ৪২ লাখ ঘনমিটার মাটি ভরাট, ১টি ফ্লাইওভার, ৪টি সেতু, ৫৫টি কালভার্ট, ১২টি ফুটওভারব্রিজ ও ১টি আন্ডারপাস নির্মাণ কাজ। এছাড়া, ১ হাজার ৭শ ৮৭ জন পরামর্শক ও প্রায় আড়াই হাজার মানুষ আউটসোর্সিং জনবল হিসেবে কাজ করবে প্রকল্পটিতে।

গত ১২ মে ২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিত হওয়া পিইসি সভার কার্যপত্র থেকে জানা যায়, বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় সাড়ে ৪৮ কিলোমিটারের মহাসড়কটির উন্নয়নে ৪ হাজার ৪শ ৩০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাবনা পাঠায় সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ। যদিও সভায় পুনর্গঠিত ডিপিপিতে ২শ ৪২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা কমায় পরিকল্পনা কমিশন। বলা হয়, চলতি বছরের অক্টোবরে শুরু হয়ে প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে।

এই প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে ২ হাজার ৭শ ৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ঋণ সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। বাকি ১ হাজার ৪শ ৮২ কোটি ৪ লাখ টাকা অর্থের যোগান দেবে সরকারের নিজস্ব তহবিল। যা বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত অনুসারে ২০১৫ সালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চার লেনের এক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয় ২৮ কোটি টাকা, ভারতে ১০ কোটি ও চীনে ১৩ কোটি টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশে এ খরচ গড়ে ৬০ কোটি টাকা। অন্যদিকে কেবল ঢাকা-মাওয়া সড়কের নির্মাণ পরিকল্পনা হয়েছিল ৯৫ কোটি টাকা প্রতি কিলোমিটার হিসেবে। যা বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মহাসড়ক হিসেবে এরই মধ্যে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছে।

ইকোনমিক কমিশন ফর ইউরোপ (ইউএন-ইসিই) এর পরিসংখ্যান ও ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব এথেন্সের অধ্যাপক দিমিত্রিয়স স্যামবুলাসের ‘এস্টিমেটিং অ্যান্ড বেঞ্চমার্কিং ট্রান্সপোর্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার কস্ট’ রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৫ সালে চার লেনের নতুন সড়ক নির্মাণে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ব্যয় হয় ৩৫ লাখ ডলার বা ২৮ কোটি টাকা। আর দুই লেন সড়ককে চার লেনে উন্নীত করতে খরচ হয় ২৫ লাখ ডলার বা ২০ কোটি টাকা।

সমপ্রতি প্রকাশিত বিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর সড়ক নির্মাণ বিষয়ক রিপোর্টে দেখা যায়, প্রতি কিলোমিটার নতুন চার লেনের সড়ক নির্মাণে এসব দেশে ব্যয় হয় ২২ লাখ ডলার বা ১৭ কোটি টাকা। আর দুই লেন সড়ককে চার লেন করতে খরচ হয় ১৪ লাখ ডলার বা ১১ কোটি টাকা। ৪০টি দেশের পাওয়া তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে এ রিপোর্ট তৈরি করা হয়। ‘দ্য কস্ট অব রোড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইন লো অ্যান্ড মিডল ইনকাম কান্ট্রিস’ নামের ওই রিপোর্ট তৈরি করেন অক্সফোর্ড, কলম্বিয়া ও গোথেনবার্গ বিশ্ববিদালয়ের তিন অধ্যাপক।

সূত্র জানায়, কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ দুই লেনের একটি সড়ক নির্মাণে তিন হাজার ৩৮৪ কোটি টাকা খরচ হবে; এমন প্রাক্কলন করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর। অর্থাৎ কিলোমিটারপ্রতি সড়ক নির্মাণে খরচ হবে ১৬১ কোটি টাকা। এর আগে কিলোমিটারপ্রতি সর্বোচ্চ খরচ ধরা হয়েছিল ঢাকা-মাওয়া সড়ক নির্মাণে ১০১ কোটি টাকা; তবে সেই সড়কটি চার লেনের। দুই লেন কম হয়েও মাতারবাড়ীর খাসিয়াখালী পেট্রল পাম্প থেকে ধলঘাট মোড় পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটি নির্মাণে আগের সব রেকর্ড ভেঙে কিলোমিটারপ্রতি ১৬১ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।

বাংলাদেশে সড়ক নির্মাণে মাত্রাতিরিক্ত খরচ নিয়ে বহুজাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন মহল থেকে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা হয়ে আসছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে প্রতিবেশী ভারত ও চীনে গড়ে যেখানে কিলোমিটারপ্রতি সড়ক নির্মাণে খরচ হয় ১১ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার মধ্যে, বাংলাদেশে সেখানে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হয় ৫৫ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকার মধ্যে। মাতারবাড়ীতে প্রস্তাবিত দুই লেনের সড়ক নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের হিসাবও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

এদিকে, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত শহর রক্ষা বাঁধের উপর ১৫ দশমিক দুই কিলোমিটার দীর্ঘ আউটার রিং রোড নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৩ সালে একনেকে অনুমোদনের পর ২০১৬ সালে কাজ শুরু হয়। ২০১১ সালে সিডিএ’র হাতে নেয়া ৮৫৬ কোটির প্রকল্প তখনই একদফা সংশোধিত হয়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে কাজ শুরুর পর ২০১৮ সালে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ২ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। মেয়াদ বাড়ে ২০১৯ এর জুন পর্যন্ত। কিন্তু গত বছরও কাজ শেষ না হওয়ায় মেয়াদ বাড়ছে আরো একদফা।

একই রকম অবস্থা কক্সবাজার বিমানবন্দরের ২০০৯ সালে হাতে নেয়া প্রকল্প এখনো শেষ হয়নি, কিন্তু ব্যয় ৩০২ কোটি থেকে ৬ দফায় বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ১৫ কোটিতে। এগুলো দেশের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি আর দক্ষতার উদাহরণ মাত্র। চলতি অর্থবছরের শেষ ছয় একনেক সভা পর্যালোচনায় দেখা যায়, অনুমোদিত ২৭ প্রকল্পের ১২টি সংশোধিত। পর্যবেক্ষকরা বলছেন উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে লাগামহীনভাবে।

সড়ক নির্মাণের খরচ অতীতের রেকর্ড ভেঙে যাওয়ার নেপথ্যে আসলে কী? কোথায় এবং কেনই বা সড়কটি নির্মাণে এত খরচ হবে, এর কারণ খুঁজতে যোগাযোগ করা হয় সড়ক ও জনপথ অধিদফতরে।

জানা যায়, চট্টগ্রামসহ দেশে এখন যে কয়টি সমুদ্রবন্দর আছে, তার কোনোটিই গভীর সমুদ্রবন্দরের মানদ-ে নেই। গভীর সমুদ্রবন্দর না থাকায় বড় বড় জাহাজ বন্দরের জেটিতে ভিড়তে পারে না। ডিপ ড্রাফট জাহাজের জেটি সুবিধা নিশ্চিত করতে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে চায় সরকার। সেই গভীর সমুদ্রবন্দর থেকে পণ্য আনানেওয়া সহজ করতে ধলঘাট হতে খাসিয়াখালী পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দুই লেনের সড়কটি হবে।

প্রস্তাবিত দুই লেনের সড়কের মতো সমজাতীয় পুরনো কিংবা চলমান কোনো প্রকল্প আছে কিনা তার খোঁজ করতে গিয়ে দেখা যায়, পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরে অনেক নিচু বা জলাভূমিতে পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি চার লেনের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে এক বছর আগে। সেই চার লেনের সড়কটিতে কিলোমিটারপ্রতি সরকারের খরচ হয়েছিল ৬০ কোটি টাকা। অথচ মাতারবাড়ীতে সমজাতীয় দুই লেনের সড়কটি নির্মাণে খরচ হবে পায়রা বন্দরের সড়কের চেয়ে তিন গুণেরও বেশি। পায়রা বন্দরের সড়কটি হয়েছিল চার লেনের। আর মাতারবাড়ীতে সড়কটি হবে দুই লেনের। দুই লেনের সড়ক নির্মাণে যেখানে খরচ কম হওয়ার কথা, উল্টো সেখানে তিন গুণ বেশি খরচ ধরা হয়েছে। অথচ দুটি জায়গাই সমতল থেকে অনেক নিচুতে।

সওজ অধিদফতরের আওতায় আরো কয়েকটি প্রকল্পে কিলোমিটারপ্রতি কত খরচ হয়েছে তা বের করে দেখা গেছে, রংপুর থেকে হাটিকুমরুল চার লেনের সড়কটি কিলোমিটারপ্রতি খরচ পড়েছে ৫৫ কোটি টাকা। ঢাকা-সিলেট প্রস্তাবিত চার লেনের মহাসড়ক কিলোমিটারে ৬০ কোটি টাকা, ঢাকা-মাওয়া চার লেন সড়ক ১০১ কোটি, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি খরচ হয়েছিল ২১ কোটি টাকা।

Post a Comment

Previous Post Next Post