করোনা মহামারী দিয়ে শুরু হয়েছে বিভীষিকাময় ২০২০ সাল। এর শেষ কোথায়

 

করোনা মহামারী দিয়ে শুরু

করোনা ভাইরাসে

স্টাফ রিপোর্টার:  করোনা মহামারী দিয়ে শুরু হয়েছে ২০২০ সাল। জোড়া সংখ্যার এ বছরটি মানুষের জন্য বয়ে এনেছে বিভীষিকাময় দিন। ১০০ বছর আগে ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ প্রান্তে এসে মাথাচাড়া দেয় মরণ ভাইরাস স্প্যানিশ ফ্লু। প্রাণ হারান পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষ। যদিও এ রোগের জন্ম উত্তর আমেরিকায়। বিশ্বযুদ্ধের আবহে ভাইরাস সংক্রান্ত খবরে বিধিনিষেধ জারি করে বিভিন্ন দেশ। শুধু ব্যতিক্রম ছিল স্পেন। ওই সময় স্পেনের সংবাদমাধ্যমে এ রোগের খবর ফলাও করে প্রচারিত হয়। এ থেকেই ভাইরাসটির নাম স্প্যানিশ ফ্লু।
গবেষকদের একাংশের দাবি, করোনা ও স্প্যানিশ ফ্লুয়ের মধ্যে মিলের চেয়ে অমিলই বেশি। দুই ভাইরাসই মানুষের শ্বাসযন্ত্রে আক্রমণ করে। করোনা ও স্প্যানিশ ফ্লুয়ের মধ্যে এর থেকে বেশি মিল নেই। করোনায় মৃতদের মধ্যে ১৮ শতাংশই ৮০ বছরের ঊধর্ে্ব। করোনায় ৫০ বছরের নিচে মৃতের সংখ্যা এক শতাংশেরও কম। স্প্যানিশ ফ্লুতে মৃতদের মধ্যে বেশির ভাগেরই বয়স ২৫-৪০ এর মধ্যে। মৃতের তালিকায় ৬৫ ঊর্ধ্বরা তুলনামূলক কম। স্প্যানিশ ফ্লুতে তরুণদের মৃত্যুহার কেন এত বেশি? এর সঠিক উত্তর নেই গবেষকদের কাছে। তবে চিকিৎসকদের একাংশের ধারণা- ১৮৮৫ সালের আগে স্প্যানিশ ফ্লু’র মতো কোনো ভাইরাস হানা দিয়েছিল। সেই ভাইরাসের তীব্রতা কম থাকায় মহামারীর চেহারা নেয়নি। তবে সেই সময়ে অনেকেই সেই ভাইরাসে আক্রান্ত হন। ফলে অনেক মানুষের শরীরে ভাইরাসের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যায়। এই অ্যান্টিবডির কারণেই প্রবীণদের মধ্যে বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি স্প্যানিশ ফ্লু। তাই স্প্যানিশ ফ্লুয়ে মৃতের তালিকায় তরুণদের সংখ্যা এত বেশি ছিল।

মিল না থাকুক, করোনা ও স্প্যানিশ ফ্লু রুখতে নেয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে অনেক মিল পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। ১০০ বছর আগেও স্প্যানিশ ফ্লু ঠেকাতে গৃহবন্দি থাকতে হয়েছিল মানুষকে। পরতে হয়েছিল মাস্ক। ১০০ বছর পর আবার ফিরে এলো একই চিত্র। এর আগে ১৭২০ সালে শুরু হয়েছিল প্লেগ অফ মার্সেই। পৃথিবীজুড়ে এক লাখ মানুষ এতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিল। ফ্রান্সে ৪৫ বছরের জন্য কমে এসেছিল জন্মহার। ফের শতবর্ষ পরে ১৮১৭ সালে শুরু হয় কলেরা। ১৮২০ সালে সেই কলেরা সর্বোচ্চ আকার ধারণ করে। তবে কলেরাতে কত লোক মারা গেছে তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না।

যদিও ২০১৯ সালের শেষ দিন চীনের উহান শহরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় কিন্তু ভাইরাসটির ধ্বংসলীলা অনুভব করতে পারেনি বিশ্ব। কতটা ভয়ানক হতে পারে এ আঘাত। ঠিক নতুন বছরের শুরু থেকেই তা-ব চালাতে থাকে ভাইরাসটি। বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে অদৃশ্য শত্রুর বিস্তার। সবশেষ পৃথিবীর শীতলতম মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকাতেও ছড়িয়ে পড়ে এ ভাইরাস।

আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডওমিটারসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, প্রায় ২০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আর এতে আক্রান্ত হয়েছেন বিশ্বের ৭৮ কোটি মানুষ। চাকরি হারিয়ে বেকার হয়েছেন কয়েক কোটি মানুষ। উন্নত বিশ্বে এর প্রভাব যেভাবে পড়েছে তার চেয়ে বেশি পড়েছে দরিদ্র দেশগুলোতে।

বিশ্বের দেশগুলো সতর্কতা অবলম্বন করলেও রেহাই পায়নি এ ভাইরাসের ভয়াল থাবা থেকে। করোনার প্রকোপ প্রথমে দেখা দেয় ইউরোপের দেশগুলোতে। পরে এশিয়া, আফ্রিকা সব দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে এ ভাইরাসটি ধরা পড়ে চলতি বছরের ৮ মার্চ। আর এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম ১৮ মার্চ একজন মারা যান।

দেশে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে। আর এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষের। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আশঙ্কা করছে ইউরোপের দেশগুলোয় জানুয়ারিতে করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হতে পারে।

এমন আশঙ্কার মধ্যে সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তারপর তা গোটা যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। অক্টোবরে ব্রিটেনে যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ৫০ শতাংশই এ নতুন বৈশিষ্ট্যের ভাইরাসের কবলে পড়েছেন। এ ভাইরাসটির নতুন ধরন অস্ট্রেলিয়া ও ইতালিতেও পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সব দেশ ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানানো হয়েছে।

বছর শেষে সফল ভ্যাকসিন তৈরিতে কয়েকটি দেশের নাম এসেছে। এর মধ্যে প্রভাব বিস্তার করেছে মার্কিন কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান কোম্পানি বায়োএনটেক কোম্পানির ভ্যাকসিন। যদিও রাশিয়া তাদের স্পুটনিক ভি নামে করোনাভাইরাসের টিকার সফলতা দাবি করছে। ইতোমধ্যেই অনেক দেশে এটি পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে ফাইজার ও বায়োএনটেকের টিকা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

এসব টিকা দরিদ্র দেশগুলো কবে পাবে তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। ২০২১ সালেও থাকবে করোনার ভয়ঙ্কর থাবা। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, নতুন বছরে করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হবে। কোথায় গিয়ে থামবে এর ধ্বংসলীলা তা কেউ ধারণা করতে পারছেন না।

 

 

Post a Comment

Previous Post Next Post