যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন

 যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন

 

জো বাইডেন, ছবি: সংগৃহীত

জয় নিশ্চিতের পর এক তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাইডেন বলেন, ‘দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমাকে বেছে নেওয়ায় আমি সম্মানিত। সামনের দিনের কাজগুলো আমাদের জন্য কঠিন; কিন্তু অঙ্গীকার করছি যে, আমাকে ভোট দিয়েছেন বা দেননি সেটা বিষয় নয়, আমি সব আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট হব। আমার ওপর আস্থার প্রতিদান দেব।’ এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হলেন কমলা হ্যারিস। একই সঙ্গে তিনি প্রথম এশিয়ান ও কৃষ্ণাঙ্গ।

বাইডেনের বিজয়ের খবর সামনে আসার পর রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির বিএলএম প্লাজায় উল্লসিত লোকজন ‘ঈশ্বরকে প্রশংসা, ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদায় নিয়েছেন’ বলে গান গাইতে দেখা যায়। বেসরকারি ফলাফলে জো বাইডেন নির্বাচিত হলেও এখনো পরাজয় মানতে নারাজ রিপাবলিকান প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জো বাইডেন বিজয়ের খবর প্রকাশের পরপরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাইডেন মিথ্যে জয়ের ভাব ধরার জন্য তাড়াহুড়া করছেন এবং ভোটযুদ্ধ এখনো শেষ হবার অনেক বাকি। রীতি অনুযায়ী দায়িত্ব গ্রহণের আগে নতুন প্রেসিডেন্টকে হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানান বর্তমান প্রেসিডেন্ট; কিন্তু ট্রাম্প টিম জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা ট্রাম্পের নেই।

এদিকে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা। প্রথম অভিনন্দন জানান কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এছাড়া অভিনন্দন জানিয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। জয় নিশ্চিত হওয়ার পর বাইডেন ও কমলা হ্যারিসের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলে অভিনন্দন জানান সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এছাড়া সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার এবং বিল ক্লিনটনও বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। করোনা মহামারির কারণে এবার রেকর্ড ১০ কোটির বেশি আগাম ভোট পড়েছে। যার বেশির ভাগই ডাকযোগের ভোট। বিভিন্ন রাজ্যে ভোটগ্রহণ ও গণনার সময় ভিন্ন হওয়ার কারণে ২০০০ সালের পর ভোট গণনায় এবারই সবচেয়ে বেশি বিলম্ব হয়েছে। ভোটগ্রহণের রাতেই ৪৪ রাজ্যের ভোট গণনায় এগিয়ে যান জো বাইডেন। জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের ২৫৩টি নিশ্চিত হয় তার। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২১৪তে আটকে থাকেন। বাকি ছয় রাজ্যে ভোট গণনায় দেরি হওয়ায় শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির তৈরি হয়। একই সঙ্গে নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। এর মধ্যেই তিনি নিজেকে জয়ী ঘোষণা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প; কিন্তু শেষ পর্যন্ত চারটি রাজ্যে ভোট গণনায় এগিয়ে যান বাইডেন। জয়ের খুব কাছাকাছি পৌঁছে যান তিনি।

গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টায় তিনি পেনসিলভেনিয়ায় জয়লাভ করেন। এর মাধ্যমে তিনি ২৭৩টি ইলেকটোরাল ভোট নিশ্চিত করেন। এরপর তিনি জর্জিয়া (ইলেকটোরাল ভোট ১৬), অ্যারিজোনা (১১) ও নেভাদা (০৬) অঙ্গরাজ্যে জয় পান। সব মিলিয়ে তিনি পেয়েছেন ৩০৬টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট। অন্যদিকে বাইডেনের জয়ে দ্বিতীয় মেয়াদের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। ১৯৮০ সালে জিমি কার্টার এবং ১৯৯২ সালে জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের পর এক মেয়াদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে মার্কিন ইতিহাসে জায়গা হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তিনি পেয়েছেন ২৩২ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট।

তবে পরাজয় মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, পরাজয় মেনে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তার নেই। বরং ভোট গণনা নিয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে যাবেন। তিনি বলেন, এটা কেবল একটি নির্বাচনের বিষয় নয়। এটা আমাদের নির্বাচনি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার বিষয়। সব ভোট গণনা এবং সত্যায়নের প্রক্রিয়ায় আমেরিকার জনগণ পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা আশা করে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ যেন সরকারের ওপর আস্থা পায় তা নিশ্চিত করতে আমরা এই প্রক্রিয়াকে আইনের যতগুলো দিক আছে, সবগুলোর ভেতর দিয়ে নিয়ে যাব।

তার প্রচারণা টিমের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লড়াই এখনো শেষ হয়নি। আইনি যুদ্ধ সোমবার থেকে শুরু হবে। এছাড়া গতকাল ফিলাডেলফিয়াতে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি বলেছেন, নির্বাচনের ফলের বিরুদ্ধে তারা সোমবার থেকে আইন চ্যালেঞ্জ শুরু করবেন। ভোটে অনিয়মের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ফিলাডেলফিয়াতে অনেক মৃত বাসিন্দা এবার ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে অভিনেতা উইল স্মিথের মৃত পিতার নামেও ভোট দেওয়া হয়েছে। জুলিয়ানির কথায়, আমরা যে পরিমাণ ভোটে এগিয়ে ছিলাম তা দুর্নীতি ছাড়া অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে না। প্রসঙ্গত, ট্রাম্প নির্বাচনের দিন থেকে প্রমাণ ছাড়াই ভোটে কারচুপির অভিযোগ করে আসছেন। তবে মার্কিন ফেডারেল নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে তারা নির্বাচনে জালিয়াতির কোনো প্রমাণ পাননি।

এদিকে ট্রাম্প শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন কি না—তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তবে শীর্ষ রিপাবলিকান নেতা সিনেটর মিচ ম্যাককনেল বলেছেন, নিশ্চিতভাবেই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। তিনি বলেন, আমরা সেই ১৭৯২ সাল থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আসছি। প্রতি চার বছর পরপর আমরা একটি নতুন প্রশাসনের পথে এগিয়েছি।

মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন বাইডেন

এবারের নির্বাচনে জো বাইডেন রেকর্ডসংখ্যক পপুলার ভোট বা সাধারণ মানুষের ভোট পেয়েছেন। গতকাল রাত পর্যন্ত ভোট গণনায় তিনি ৭ কোটি ৪৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫৭৯ ভোট পেয়েছেন। যা মোট ভোটের ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ৭ কোটি ৩ লাখ ৩৭ হাজার ২১৪ ভোট (৪৭ দশমিক ৭)। ট্রাম্পের চেয়ে বাইডেন প্রায় ৪১ লাখ ভোট বেশি পেয়েছেন। এই নির্বাচনে যে পরিমাণ মানুষ ভোট দিয়েছেন ১৯০০ সালের পর কোনো নির্বাচনে এতো মানুষ ভোট দেন নি। বাংলাদেশ সময় আজ ভোরে জো বাইডেনের বিজয়ী ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। খবর সিএনএন, বিবিসি ও নিউ ইয়র্ক টাইমসের।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post