ওসি প্রদীপসহ ৯ পুলিশকে আসামি করে হত্যা মামলা

কক্সবাজার প্রতিনিধি :   টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাসের নির্দেশে সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করেছেন পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী। ঘটনার কিছুক্ষণ পর ওসি প্রদীপ কুমার দাস ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি এসেই তখনও জীবিত থাকা মেজর সিনহাকে উদ্দেশ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তার শরীরে লাথি মারেন। মৃত্যু নিশ্চিত হলে একটি ‘ছারপোকা গাড়ি’তে তুলে মেজর সিনহাকে কঙ্বাজার জেলা সদর হাসপাতালের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। বুধবার (৫ আগস্ট) দুপুরে টেকনাফের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এমন অভিযোগ আনেন বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস। তিনি ভিকটিমের বড় বোন। আর্জি শুনানিকালে তিনি হতবিহ্বল, শোকাহত অবস্থায় ছিলেন।

গত ৩১ জুলাই দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে কঙ্বাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছরা পুলিশ চেকপোস্টে মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ৯ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (আইসি) লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি ও টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে দুই নাম্বার আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন- বাহারছরা তদন্ত কেন্দ্রের এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এএসআই টুটুল ও কনস্টেবল মোহাম্মদ মোস্তফা। মামলাটি ‘ট্রিট ফর এফআইআর’ হিসেবে আমলে নিয়ে ৩টি আদেশ দিয়েছে আদালত। আদালতের দেয়া আদেশে পুলিশকে বলা হয়েছে, মামলাটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করতে। দ্বিতীয় আদেশে বলা হয়, মামলাটি রেকর্ডের পর র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) মামলাটি তদন্ত করবে। আদালতের তৃতীয় আদেশে বলা হয়, আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে মামলার অগ্রগতি আদালতকে অবহিত করতে হবে। মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ‘৩১ জুলাই রাতে একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও চিত্র ধারণ শেষে রাত আনুমানিক সাড়ে টার দিকে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান নিজস্ব প্রাইভেটকার নিয়ে টেকনাফ উপজেলার শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে পৌঁছলে ১নং আসামি লিয়াকত ও ৩নং আসামি এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত গাড়ি গতিরোধ করে মেজর সিনহা পরিচয় দেয়। এরপরও সিনহার সঙ্গে থাকা ক্যামরাম্যান সিফাতকে টানা হেচড়া করে গাড়ি থেকে নামিয়ে ফেলে। এ সময় সিফাত দুই হাত উঁচু করে গাড়িতে বসে থাকা সিনহার পরিচয় দেয়। পরিচয় দেয়ার পরও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। ‘তোর মতো অনেক মেজর দেখেছি’ বলে সিনহাকেও গাড়ি থেকে নামিয়ে ফেলে। মুহূর্তে কয়েক রাউন্ড গুলি করলে সিনহা মাটিতে পড়ে যায়। এ সময় মেজর সিনহা জীবন রক্ষার্থে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পুলিশ সদস্যরা তাকে চেপে ধরে পুনরায় মাটিতে ফেলে দেয়।

মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য ১নং আসামি এসআই লিয়াকত আরও এক রাউন্ড গুলি করে। মৃত্যু নিশ্চিত করে টেকনাফ থানা পুলিশ কঙ্বাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। সিনহার মৃত্যুর ঘটনাটি ধাপাচাপা দেয়ার জন্য ইয়াবা, গাঁজা ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। আদালত থেকে বেরিয়ে মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেন, ‘ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশনা মতে এসআই লিয়াকত ঠা-া মাথায় গুলি করে আমার ভাইকে হত্যা করেছে। পরে আমার ভাইয়ের শরীরে ও মুখে বিভিন্ন জায়গায় পা দিয়ে লাথি মেরে মুখ বিকৃত করার চেষ্টা করে। এ সময় অন্য আসামিরা তাদের সহযোগিতা করে। তাই আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।’ আমি চাই, ‘আমার ভাই রাশেদের হত্যাকারীরা আইনের আওতায় আসুক। দোষীদের শাস্তি কামনা করছি।’ মামলার প্রধান কেঁৗসুলি সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা জানান, মামলার শুনানি শেষে সন্তুষ্ট হয়ে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন বিচারক তামান্না ফারাহ।

 

 

Post a Comment

Previous Post Next Post