মেহেরপুর যাদুখালী দাদপুর সুইজ গেট বন্ধ করে মাছ চাষ ৩-৪ গ্রামের মাঠ পানির নীচে ॥ ৫০ কোটি টাকার মৌসুমী ফসল ক্ষতির মুখে

Meherpur Pic-1

মেহেরপুর: পানিতে তলিয়ে যাওয়া গোপালপুর মাঠ।ছবি-  kbdnews

Meherpur Pic-2

মেহেরপুর: পানির নীচের ফসল দেখছে কৃষক।ছবি- kbdnews

স্টাফরিপোটার : মেহেরপুর সদর উপজেলার যাদুখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজের পিছে অবসি’ত দাদপুর সস্নুইজ গেট বন্ধ থাকায় মুজিবনগর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মাঠের উঠতি ফসল বর্তমানে পানির নিচে। এ ধরণের অভিযোগ আরো করেছেন সদর উপজেলার কাঁঠালপোতা, সোনাপুর ও পিরোজপুর গ্রামের কৃষকরা। এ মৌসুমে হাজার হাজার বিঘা জমির উঠতি ফসল পানির নিচে ডুবে থাকায় চলতি মৌসুমে ভূক্তভোগী কৃষকদের প্রায় ৫০ কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়তে হবে। এলাকার দাদপুর বিলের (নেংড়ু- ও টোপলার বিল সংলগ্ন) মাছ চাষীরা সস্নুইজ গেট বন্ধ করে রাখায় এলাকার হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্য বিপর্যয় ঘটতে চলেছে।
এলাকাবাসী জানান- গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে জেলার গাংনী উপজেলার সাহারবাটি, গাড়াডোব, কসবা-ভাটপাড়া, সদর উপজেলার দরবেশপুর, সিংহাটি, চুয়াডাঙ্গা জেলার গোকুলখালী সহ এলাকার পানি কাজলা নদী দিয়ে ভৈরব নদে পড়তে দাদপুর বিল ও বিল সংলগ্ন বিভিন্ন মাঠে জমেছে। এদিকে সস্নুইজ গেটটি খুলে না দওয়ায় পানির চাপ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মৌসুমি ফসল বর্তমানে পানির নীচে তলিয়ে গেছে। তারা আরো জানান- এলাকাবাসীকে যাদুখালী হয়ে গোপালপুর গ্রামে যাওয়ার একমাত্র রাসত্মাটি সস্নুইজ গেটের উপর দিয়ে। পানির চাপ বৃদ্ধি পেলে রাসত্মাটিও ভেঙে যেতে পারে।
গোপালপুর গ্রামের কৃষক লিয়াকত আলী জানান- গোপালপুর গ্রামের মাঠে মৌসুমে তিনি ৮ বিঘা জমিতে ধান, ৬ বিঘা জমিতে পাট, এক বিঘা জমিতে সিম ও ১০ কাঠা জমিতে ঝাল চাষ করেছেন। তিনি বলেন আর দুই-চার দিন ফসল পানির নীচে থাকলে তাকে এ মৌসুমে কমপড়্গে ৪ লাখ টাকার ড়্গতির সম্মুখীন হতে হবে। গোপালপুর মাঠে একই গ্রামের স্বপন মাষ্টার আড়াই বিঘা জমিতে ধান, আতিরম্নল আড়াই বিঘা জমিতে সিম, মিজানুর ২ বিঘা জমিতে ধান, এক বিঘা জমিতে পাট ও এক বিঘা জমিতে সিম, কামরম্নল এক বিঘা জমিতে ধান ও ৪ বিঘা জমিতে পাট, তাইজুল ২ বিঘা জমিতে ধান, এক বিঘা জমিতে সিম ও এক বিঘা জমিতে ঝাল এবং মতিন খন্দকার ও তাদের অন্যান্য ভাইরা ১০ বিঘা জমিতে ধান, ৩ বিঘা জমিতে পাট, ২ বিঘা জমিতে সিম ও এক বিঘা জমিতে ঝাল চাষ করেছেন। কৃষকরা জানালেন তাদের এসব ফসল বর্তমানে পানির নীচে এবং দ্রম্নত পানি সরাতে না পারলে ব্যাপক ড়্গতির মধ্যে পড়তে হবে।
মেহেরপুর জেলা জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সভাপতি গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ জানান- গোপালপুর মাঠের ফসল বর্তমানে পানির নীচে। দ্রম্নত পানি নিষ্কাশন জরম্নরী। তা না হলে শুধু ওই মাঠের প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমির ফসল বাবদ গ্রামের কৃষকদের ১৫ কোটির অধিক টাকার ড়্গতি মেনে নিতে হবে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার কাঁঠালপোতা গ্রামের আলাই আমিন সহ এলাকার অনেকে বলেন- সস্নুইজ গেট বন্ধ থাকায় বৃষ্টির পানি ভৈরব নদে নামতে পারছেনা। বিধায় শুধু গোপালপুর মাঠই নয়; পাশাপাশি কাঁঠালপোতা, সোনাপুর, গহরপুর ও বলিয়ারপুর গ্রামের মাঠের মৌসুমী ফসল পানিতে তলিয়ে আছে। পানি না সরলে এসব মাঠের ফসল বাবদ প্রায় ৩০-৪০ কোটি টাকা ড়্গতির মুখে পড়তে হবে এলাকার কৃষকদের।
দাদপুর বিলের সেক্রেটারি নগেন হালদার ফসলের ড়্গতি হতে পারে স্বীকার করে বলেন- বর্তমানে সস্নুইজ গেটটি দিয়ে সীমিত আকারে পানি বের হওয়ার ব্যবস’া আছে। আমি আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপড়্গের সাথে কথা বলে সস্নুইজ গেটটি সম্পূর্ণ খুলে দেওয়ার ব্যাপারে পরবর্তী ব্যবস’া নেব।
এ ব্যাপারে মেহেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুদুল আলম বলেন- স’ানীয়ভাবে সোনাপুর, কাঁঠালপোতা, বলিয়ারপুর, গহরপুর এলাকার কোন মানুষ আমার কাছে কোন অভিযোগ দেয়নি। তবে আমার জানামতে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দলিয়ারপুর এলাকার একটি বাঁধ কেটে দেওয়ায় অত্র এলাকায় পানি ঢুকছে। ওই পানি নিষ্কাশনে আমি সংশিস্নষ্ট পিরোজপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুস সামাদ বাবলু বিশ্বাসকে যাদুখালীর দাদপুর সস্নুইজ গেটের মাধ্যমে ব্যবস’া নিতে পরামর্শ দিয়েছি।
মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ওসমান গনি বলেন- গোপালপুর মাঠের ফসল পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় গ্রামবাসীর পড়্গ থেকে গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টার দিকে বেশ কিছু লোক আমার অফিসে আসেন এবং তারা একটি অভিযোগ দিয়ে যান। বিষয়টি তদনত্ম সাপেড়্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস’া নিতে এদিন বিকেলে মহাজনপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ মোঃ আমাম হোসেন মিলু সহ ঘটনাস’লে যাই এবং সস্নুইজ গেটির একপাশে নষ্ট দেখি। অন্যপাশ দিয়ে সামান্য পানি বের হচ্ছ্‌ে। আমি নিজেই চেষ্টা করি বেশি বেশি পানি বের করে দেওয়ার জন্য। কিন’বলা যায় চেষ্টা সেভাবে সার্থক হয়নি। তিনি আরো বলেন- যদি দু’এক দিন বড় ধরণের বৃষ্টি না হয়; তবে পানি নেমে মাঠের জলবদ্ধতা দূর হবে।

Meherpur Pic-2

Post a Comment

Previous Post Next Post