৩৬ হাজার কৃষক ব্যাংকিং সেবার বাইরে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার:   হঠাৎ করেই আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় খোলা কৃষকের প্রায় ৩৬ হাজার ব্যাংক হিসাব কমে গেছে। মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে চলতি বছরের মার্চ শেষে এই হিসাব ১ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৯৪টিতে এসে দাঁড়িয়েছিল। তবে গত ডিসেম্বর শেষে এই হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫টি। সেই হিসাবে মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে ৩৫ হাজার ৮১১টি ব্যাংক হিসাব কমে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে বাতিল করা হয়েছে এসব ব্যাংক হিসাব।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম জানান, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় বিশেষ হিসাবগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সমপ্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত

৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারের কাছে টাকা পৌঁছে দিতে ১০ টাকার একাউন্ট ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, জানুয়ারি থেকে মার্চ প্রান্তিকে কৃষকদের ৩৬ হাজার ব্যাংক হিসাব কমে যাওয়ার কারণ এখনো সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে এর কারণ জানতে চেয়ে সোনালী ব্যাংকে চিঠি দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হালনাগাদের সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্যাদি সরবরাহ করতে না পারায় এই হিসাব বাতিল করা হয়েছে।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তির হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, দেশব্যাপী কৃষকদের ব্যাংক হিসাব কমলেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতাভোগীর সংখ্যা বেড়েছে সাড়ে ১২ লাখ। জানুয়ারি থেকে মার্চে মুক্তিযোদ্ধার হিসাব এবং ১০ টাকা, ৫০ টাকা ও ১০০ টাকার হিসাবের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, বিশেষ সুবিধার আওতায় দেশে প্রায় ২ কোটি ১৩ লাখ ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে। এতে জমা রয়েছে ২ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে প্রায় ৫১ লাখ হিসাব সরকারি ভর্তুকি ও বেতন প্রদানে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসব হিসাবে ৯১৫ কোটি টাকা ভর্তুকি ও বেতন দেয়া হয়েছে। আর ৭২ হাজার হিসাবে বিশেষ সুবিধার ঋণ গেছে ৩৪৯ কোটি টাকা। ৬৫ হাজার ১৮৪টি হিসাবে ২৪৬ কোটি টাকা প্রবাসী-আয় জমা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি খোলা হয়েছে কৃষকদের হিসাব। কৃষকদের হিসাব ১ কোটি ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৯৪টি। এরপরই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতাভোগীদের হিসাব ৬৮ লাখ ৬৪ হাজার ৫২টি। অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান হিসাব রয়েছে ২৭ লাখ ৮ হাজার ৪০৯টি। পোশাক শ্রমিকদের ব্যাংক হিসাব আছে ৩ লাখ ২২ হাজার ২৪৪টি। মুক্তিযোদ্ধাদের হিসাব ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৮৯টি।

প্রসঙ্গত, ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০১০ সাল থেকে একের পর এক নির্দেশনার মাধ্যমে কৃষকসহ আর্থিক সেবা প্রত্যাশী জনগোষ্ঠীর জন্য এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে। এসব হিসাব সচল রাখতে ২০১৫ সালে ২০০ কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল করা হয়েছে। যেখানে স্বল্প সুদে ঋণ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য এসব হিসাব খোলা ও পরিচালনায় কোনো ফি কাটা হয় না।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post