স্টাফ রিপোর্টার : প্রতিবছর কোরবানির ঈদের আগে থেকেই নিয়ম করে যেন ব্যবসায়ীরা বাড়াত গরম মসলার দাম। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। দাম তুলনামূলক কিছুটা কম। বিক্রিও আগের মতো নেই। বাজারে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ -২৬০০ টাকা। তবে একেবারে ভালো মানেরটা ৪০০০ টাকা। এছাড়া জিরা বিক্রি হচ্ছে ৩৩০-৩৫০ টাকায়, দারুচিনি ৪০০-৪৫০ টাকা, লবঙ্গ ৯০০-১০০০ টাকা, গোলমরিচ ৬০০-৭০০ টাকা এবং তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। এছাড়া পেঁয়াজ ৩৫-৫০ টাকায় ও রসুন ৮০-৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এই দামে সন্তুষ্ট নয় ক্রেতা। তাদের দাবি, মহামারীর শুরুর দিকেই আন্তর্জাতিক বাজারে অধিকাংশ মসলার দাম অনেক কমে গেছে। কিন্তু সেই তুলনায় দেশে দাম ততটা কমেনি। ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করে বলেছিল, ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত মসলার দাম কমাবে। তবে সত্যিকারে সেই হিসেবে দাম কমেনি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।
রাজধানীর কাওরান বাজারে রহিম নামের একজন ক্রেতা বলেন, মানুষের এখন বেঁচে থাকাই কঠিন। এই সময়ে সব কিছুর দামই কম থাকার কথা। কিন্তু না। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যে হারে কমেছে দেশে সেই হারে কমেনি।
কিন্তু আমদানিকারক ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, অন্য সময়ের চেয়ে এখন দাম কম। কারণ করোনার আঘাতে মানুষের আয়-রোজগার কমে গেছে। আগের তুলনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও কম কিনছেন মানুষ। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পণ্যটির চাহিদা অনেক কমে গেছে। এ কারণে দেশের বাজারেও দাম কমেছে।
বাংলাদেশ পাইকারি মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্যাহ বলেন, এ বছর তুলনামূলকভাবে দাম মোটামুটি কম। কারণ করোনার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের চাহিদা অনেক কমে গেছে।
তিনি বলেন, কোরবানি ঈদকে ঘিরে মসলা বেশি বিক্রি হয়। কিন্তু এবছর অনেকেই কোরবানি দিতে পারবে না। তাই মসলাও সেই
পরিমাণে কিনছে না। এর ফলে চাহিদা কমছে, দামও কমছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম যে হারে কমেছে দেশে সেই হারে কমেনি- ক্রেতাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, খুচরা বাজার আমরা নিয়ন্ত্রণ করি না। করতে পারবোও না। তারা কত টাকা কোন জিনিস বিক্রি করে এই তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে তাদেরও উচিত সহনীয় পর্যায়ে মুনাফা করা। কাওরান বাজারের হাজী মিজান স্টোরের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, গত বছর এমন দিনে এত বেশি বেচাবিক্রি ছিল যে, নাক চুলকানোর সময় ছিল না। মানুষ তেমন দামা কষাকষিও করত না। কিন্তু এখন ক্রেতাও কম। দামাদামিও করছে তারা। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে তিনি বলেন, অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় মসলার দাম কম এখন। এ বছর করোনাভাইরাস সঙ্কটের এই সময়ে আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে গরম মসলার দাম ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। গত ১৩ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে তারা এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে মসলার নতুন দাম নির্ধারণ করেছিলেন। মূল্য তালিকা অনুযায়ী- জিরা (ভারত) প্রতি কেজি ৩০০-৩৪০ টাকা, দারুচিনি (চীন) প্রতিকেজি ৩১০-৩৩০ টাকা, দারুচিনি (ভিয়েতনাম) প্রতিকেজি ৩৫০-৩৭০ টাকা, লবঙ্গ প্রতিকেজি ৬৮০-৭২০ টাকা, এলাচ প্রতিকেজি ২৮০০-৩২০০ টাকা, গোলমরিচ (সাদা) ৫৫০-৫৮০ টাকা, গোলমরিচ (কাল) ৩৬০-৩৮০ টাকা।