জঙ্গি আতঙ্কে পুলিশ

জঙ্গি আতঙ্কে পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার :   টার্গেট মিশনে বারবার চেষ্টা করলেও সুবিধা করতে পারছে না জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেস্ট (আইএস)। সংগঠনটি এখন তুচ্ছ ঘটনায়ও দায় স্বীকার করতে শুরু করেছে। গত ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান হোটেলে হামলার দায় স্বীকার করলেও এই জঙ্গিগোষ্ঠীর নামে বাংলাদেশে গত ৩ বছরে অর্ধশতবার শুধু বড় ধরনের হামলার হুমকিই দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে তারা ককটেল নিক্ষেপ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। জঙ্গিদের চোরাগুপ্তা এসব হামলায় আতঙ্কে রয়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিন। সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতর থেকে পুলিশ বাহিনীকে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশও দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের ২৬ মে মালিবাগে এবং ২৯ এপ্রিল গুলিস্তানে পুলিশকে টার্গেট করে যে হাতবোমা নিক্ষেপ করা হয় তারও দায় স্বীকার করে নিজেদের অনলাইন পাতায় স্ট্যাটাস দেয় আইএস। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় পুলিশকে টার্গেট করে হামলা হয়। পরের দিন আইএসের পক্ষ থেকে এ হামলারও দায় স্বীকার করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, হলি আর্টিজানে বড় ধরনের হামলার ঘটনার পর বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গত ৩ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে দেয়া অব্যাহত রেখেছে। ফলে আন্তর্জাতিক এই সন্ত্রাসী সংগঠনটি বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ওপর প্রচ- ক্ষিপ্ত। তারা পুলিশকে টার্গেটে রেখেছে। চেষ্টা করছে পুলিশের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালানোর। কিন্তু গত ৫ মাসে যে ককটেল হামলার দায় তারা স্বীকার করেছে তার প্রায় প্রতিটি হামলার ঘটনা একই রকম প্রতীয়মান হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। ঘটনার চরিত্রও প্রায় এক।

৩টি হামলাই চোরাগোপ্তা এবং ৩টি ঘটনাতেই পুলিশ সদস্য আহত হলেও কেউ নিহত হয়নি।

এ ব্যাপারে পুলিশের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সিরিয়ার রাকা থেকে আইএস পরাজিত হওয়ার পর থেকে তারা অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে সিরিয়ায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ‘দেইর এজোর’ শহরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সমর্থিত সরকারি বাহিনী। তার এক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সিরীয় যোদ্ধারা আইএসকে তাদের ‘খিলাফতের রাজধানী’ রাকা থেকে বিতাড়িত করে।

এরপরই তারা ২০১৮ সালের শুরুতে ইরাকেও ধারাবাহিকভাবে পরাজিত হয়ে তারা আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর তারা নতুন কৌশল অবলম্বন করে। সারা পৃথিবীতে যারা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়, তাদের উদ্দেশে আইএস মেসেজ পাঠায়। আইএসে যোগ দেয়ার জন্য সিরিয়ায় আসার দরকার নেই। যার যার দেশে থেকে তথাকথিত ‘জেহাদ’ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। এ পরিস্থিতিতে পুলিশ জানিয়েছে, নব্য জেএমবির কিছু সদস্য অধরা আছে বাংলাদেশে।

যারা আত্মগোপনে থেকে আইএসের হয়ে কাজ করছে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত অভিযান ও সতর্কতার কারণে তারা বড় ধরনের হামলা চালাতে পারছে না।

এ ব্যাপারে পুলিশের অ্যান্টি-টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামান বলেন, শুধু নব্য জেএমবি নয়, হিযবুত তাহরীর বলেন, হরকাতুল জেহাদ বলেন, সব জঙ্গিই এখন অনেক নিষ্ক্রিয়। শুধু আইএস নর্তনকুর্দন করছে, কিন্তু তারা এটুকু বোঝে না যে তাদের এই দৈন্যে মানুষ হাসে। পৃথিবীজুড়ে যাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত ছিল সেই আইএস এখন ককটেল হামলার দায় স্বীকার করার মধ্যে আত্মতৃপ্তি খোঁজে। এখানেই আমি বাংলাদেশের পুলিশ, র‌্যাব গোয়েন্দা সংস্থার প্রশংসনীয় ভূমিকার কথা উল্লেখ করতে চাই। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিবাদ দমনে যে সফলতা দেখিয়েছে, সেটা বিশ্ববাসীর কাছে রোল মডেল হয়ে আছে।

উন্নত প্রযুক্তির দেশগুলোতে জঙ্গিবাদ আছে, জঙ্গিবাদের ঘটনা ঘটছে, কিন্তু তারাও বাংলাদেশের মতো করে জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়নি। ফলে তারা এখন আমাদের কাছ থেকে জানতে চায়, শিখতে চায় কীভাবে জঙ্গিবাদ দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তিনি আরো বলেন, অবশ্য আমরাও কোনো আত্মতৃপ্তিতে ভুগছি না। কারণ হচ্ছে জঙ্গিরা দিনরাত তপস্যা করছে নাশকতার। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে টার্গেট করে অগ্রসর হচ্ছে বারবার। কিন্তু একের পর এক পুলিশি অভিযানে তারাই তছনছ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবারই ভেস্তে যাচ্ছে তাদের মিশন। জঙ্গিবিরোধী জনসমর্থন আছে চোখ-কান খোলা রেখে এভাবে তৎপরতা অব্যাহত রাখা গেলে আইএস কেন কোনো অপশক্তি বাংলাদেশে আর মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না।

 

 

Post a Comment

Previous Post Next Post