অবৈধ অর্থের উৎস তদন্তে মাঠে নেমেছে এনবিআর

এনবিআর

১০ সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখছে বিএফআইইউ

স্টাফ রিপোর্টার  : দেশে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনাসহ সামাজিক অপরাধ এবং দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে এবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মাঠে নেমেছে। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির সাথে জড়িত থাকতে পারে, এমন সন্দেহভাজনদের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন এমপি এবং যুবলীগের কয়েকজন নেতা ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তাসহ ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। এদিকে, ক্যাসিনো ইস্যু ও চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকে কেন্দ্র করে ঢাকার অন্তত ১০ জন সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখছে আর্থিক গোয়েন্দা তথা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, ক্যাসিনো ব্যবসার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের পাশাপাশি গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় নাম আসা সাংবাদিকদের ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখার নির্দেশনা রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএফআইইউ’র শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ (স্থগিত) করা হয়েছে। এছাড়া আরও অনেকেরই ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর মধ্যে সাংবাদিকরাও আছেন। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চাহিদার পাশাপাশি পত্রিকা বা কোনো গণমাধ্যমে কারও নাম আসলে তাদের ব্যাপারেও খোঁজ নিতে হয়। সে কারণে অন্তত ১০ জন সাংবাদিকের ব্যাংক হিসাব খতিয়ে

দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। রাজধানীর প্রীতম-জামান টাওয়ারে ক্যাসিনো ব্যবসার সাথে ২ জন সাংবাদিকের সম্পৃক্ততা ছিল বলে অভিযোগ আছে। এ নিয়ে গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি পল্টন মডেল থানার ওসি মাহমুদুল হক মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনারকে লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন। আরও কিছু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা বিভিন্ন ক্যাসিনো মালিকের কাছ থেকে নিয়মিত আর্থিক সুবিধা নিতেন।

এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, গত কয়েকদিনে পুলিশ র?্যাবের অভিযানে যুবলীগের যে ২ জন নেতা গ্রেফতার হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে যাদের নাম এসেছে, এমুহূর্তে তাদের ব্যাংক একাউন্টের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। সন্দেহভাজনদের আয়ের উৎস দেখার জন্য এই তদন্ত করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে এবং যাদের কাছে অর্থ পাওয়া গেছে, আমরা তাদের ট্যাঙ্ ফাইল খতিয়ে দেখছি। আর এই কর এর বিষয় যাচাই করার জন্য আমরা সন্দেহভাজনদের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ বা তলব করেছি। তারা যাতে টাকা সরিয়ে নিতে না পারে, সেজন্যও আমরা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি।

এনবিআর চেয়ারম্যান আরও জানিয়েছেন, অবৈধভাবে ক্যাসিনো পরিচালনা করা এবং টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির সাথে জড়িত থাকতে পারে, এমন সন্দেহভাজনদের ব্যাপারেই অনুসন্ধানের জন্য তারা এখন মাঠে নেমেছেন।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটও সন্দেভাজন কয়েকজনের ব্যাংক একাউন্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে। এই ইউনিটের প্রধান আবু হেনা মো. রাজী হাসান বলছিলেন, অর্থ পাচার প্রতিরোধ সম্পর্কিত আইনে তারা তথ্য পাওয়ার পর তদন্ত করবেন। এসব পদক্ষেপ যেনো লোক দেখানো না হয়, সেটা সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়ছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ দুর্নীতি এবং সামাজিক অপরাধ বিরোধী চলমান অভিযানে সন্দেহভাজনদের আর্থিক লেনদেন বন্ধের যে ব্যবস্থা এখন নেয়া হচ্ছে, সেটা অপরাধ দমনে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন তারা।

সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, লোক দেখাতে নয়, দুর্নীতি-মাদক-জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে সরকার। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি যারাই করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। চুনোপুঁটি-রাঘববোয়াল কেউই ছাড় পাবেন না। ওবায়দুল কাদের বলেন, যাদের ধরা হয়েছে, তারা সত্যিকার অর্থে অপকর্মকারী। মাদক, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি যারাই করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। চুনোপুঁটি-রাঘববোয়াল কেউই ছাড় পাবে না। তিনি আরও বলেন, ব্যক্তি চুনোপুঁটি হলেও অনেকে দুর্নীতিতে রাঘববোয়াল হয়েছেন। অপরাধী যত বড় আর যত ছোট হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। উল্লেখ্য, গত ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার রাজধানীর ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবের ক্যাসিনোয় অভিযান চালায় র‌্যাব। ঐ রাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর শুক্রবার গুলশানের নিকেতন থেকে গ্রেফতার করা হয় ঠিকাদার জি কে শামীমকে। একই দিন গ্রেফতার হন কৃষক লীগ নেতা ও কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি সফিকুল আলম ওরফে ফিরোজ। এরপর গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি ক্যাসিনোয় অভিযান চালানো হয়েছে। এর জেরে খালেদ, শামীম, ফিরোজ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনসহ কয়েকজনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। আর এরই সূত্র ধরে, পুলিশ র?্যাবের অভিযানে ক্লাব বা যুবলীগের পর গত মঙ্গলবার ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের ২ জন নেতার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে নগদ ৫ কোটি টাকা এবং ৭২০ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করে।

Post a Comment

Previous Post Next Post