স্টিাফরিপোটার : নাগরিকদের আপত্তির মধ্যেই সব পর্যায়ে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। গতকাল রোববার গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। যা আজ ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়েছে। এই দাম অনুযায়ী এক চুলার জন্য গ্রাহকদের ৭৫০ টাকার বদলে ৯২৫ টাকা এবং দুই চুলার গ্রাহকদের ৮শ’ টাকার বদলে ৯৭৫ টাকা করে গুনতে হবে। গৃহস্থালিতে মিটারে যারা গ্যাসের বিল দেন, তাদের প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহারের জন্য ১২ টাকা ৬০ পয়সা করে দিতে হবে। এতোদিন প্রতি ঘনমিটারে তাদের বিল হত ৯ টাকা ১০ পয়সা।
গতকাল রোববার বিকালে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এক গণবিজ্ঞপ্তিতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর এই ঘোষণা দেয়। সাংবাদিক সম্মেলনে কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য মিজানুর রহমান ও রহমান মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন।
যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম আজ সোমবার থেকে প্রতি ঘনমিটারে ৩৮ টাকা থেকে বেড়ে ৪৩ টাকা হবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার, শিল্প ও বাণিজ্যক খাতেও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে শিল্পোৎপাদনে খরচ বাড়বে, ব্যবসায়ীরাও তা তুলবেন দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে। শেষ বিচারে ভোক্তাদের পকেট থেকেই তা যাবে। বিইআরসি’র চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম জানান, সাংবাদিক সম্মেলনে আরও জানানো হয়, গ্যাসের গড় দাম ঘনমিটারে ৭ দশমিক ৩৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৮০ টাকা করা হয়েছে। প্রতি ঘনমিটার বিদ্যুতের জন্য গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ দশমিক ৪৫ টাকা, ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ উৎপাদন (ক্যাপটিভ পাওয়ার) ব্যবহারের জন্য প্রতি ঘনমিটার ১৩ দশমিক ৮৫ টাকা, সার কারখানায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে একই ইউনিটের দাম পড়বে ৪ দশমিক ৪৫ টাকা। এছাড়াও শিল্পে ব্যবহারের জন্য প্রতি ঘনমিটিার ১০ দশমিক ৭০ টাকা, চা বাগানে ব্যবহারের জন্য প্রতি ঘনমিটিার ১০ দশমিক ৭০ টাকা, বাণিজ্যিক খাতে হোটেল-রেস্টুরেন্টে ২৩ টাকা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ১৭ দশমিক ০৪ টাকা ও সিএনজিতে ৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, প্রতি ঘনমিটার সিএনজির মূল্যহারের মধ্যে ফিড গ্যাসের মূল্যহার ৩৫ টাকা এবং অপারেটর মার্জিন ৮ টাকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে গ্যাসের দাম সমন্বয়ের জন্য প্রস্তাব করেছিল পেট্রোবাংলা ও গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানিগুলো। এসব সংস্থা গ্যাসের দাম গড়ে ১০২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিল। আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়ার পর গ্যাসের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তারা জানিয়েছিলেন।
তবে বিইআরসি’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, গণশুনানি ও যৌক্তিকতা বিবেচনায় গ্যাসের দামের বিষয়টি নির্ধারণ করা হবে।
তবে গ্যাসের দামের বিষয়টি অনেকাংশে নির্ভর করে এর ওপর সরকারের দেয়া ভর্তুকির ওপরেও। এরপর গত ১১ থেকে ১৪ মার্চ ঐ প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি করে বিইআরসি। সেই গণশুনানির সিদ্ধান্তই গতকাল রোববার জানানো হয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়। ঐ বছরের মার্চ ও জুলাই মাসে ২ দফায় এই নতুন মূল্য কার্যকর করার কথা ছিল। মার্চ মাসের নতুন মূল্য কার্যকর হলেও হাইকোর্টের আদেশে জুলাই মাসের মূল্যবৃদ্ধি স্থগিত হয়ে যায়।