নুসরাতের ভিডিও ধারণ ও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার অপরাধ ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে মামলা

 

পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ সাইবার আদালতের

 

ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার : যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদ করায় আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির জবানবন্দির ভিডিও ধারণ ও তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ায় সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।

এক আইনজীবীর মামলার আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল সোমবার ঢাকার সাইবার আদালতের বিচারক মোহাম্মাদ আসলাম জগলুল হোসেন পিবিআইকে অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

পিবিআইয়ের ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে অভিযোগ তদন্ত করে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট আদালতের পেশকার শামীম আহম্মেদ জানিয়েছেন।

ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলা তুলে না নেয়ায় গত ৬ এপ্রিল কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় নুসরাতের গায়ে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার

আসামিদের ধরতে গড়িমসির অভিযোগ ওঠার পর ১০ মার্চ মোয়াজ্জেম হোসেনকে সোনাগাজী থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে বদলি করা হয়। ঐদিন রাতেই ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত। পরদিন ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, থানায় ওসির সামনে অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরতে গিয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন নুসরাত।

নুসরাত তার মুখ দুই হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। সেসময় ওসি মোয়াজ্জেম ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি এও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে’। ঐ ভিডিও ধারণের জন্য ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে সকালে মামলার আবেদন করেন সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন নামের একজন আইনজীবী।

তার আরজিতে বলা হয়, গত ২৭ মার্চ ঐ ছাত্রীকে অধ্যক্ষ শ্রেণীকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠলে দু’জনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করতে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না।

আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, যেহেতু ওসি নিয়ম বহির্ভূতভাবে অনুমতি ব্যতিরেকে ভিডিও ধারণ করে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার করেন এবং অপমানজনক ও আপত্তিকর ভাষা প্রয়োগ করেন, তাই তা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ অনুযায়ী দ-নীয় অপরাধ। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া এই ভিডিও নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা। তাদের মতে, ভিকটিমের এ ধরনের ভিডিও ধারণ অপরাধের মধ্যে পড়ে। ঐ ঘটনায় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারা মামলাটি দায়ের করা হয়। একইসাথে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার আবেদন জানান।

অভিযোগকারীর বক্তব্য কেউ আইন না মেনে ভিডিও করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে বলেও পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন। ভিডিওটি ধারণ ও তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মোয়াজ্জেমের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Post a Comment

Previous Post Next Post