টানা ৫ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে চলেই গেলেন ফেনীর সেই দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি

nusrat

স্টাফ রিপোর্টার  : টানা ৫ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে চলেই গেলেন ফেনীর সেই দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। গতকাল রাতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মারা যান তিনি। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৯টার সময় তার মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।

ডা. সামন্ত লাল সেন রাতে আইসিইউ থেকে বেরিয়ে ঐ ছাত্রীর বাবা ও ভাইকে ডেকে বুকে জড়িয়ে ধরলে তারা বুঝতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা. হোসাইন ইমাম ঐ মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে তার মৃত্যু হয়েছে।

এর আগে গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছিলেন, নুসরাতের অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত তাকে সিঙ্গাপুরে না নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সেই দেশটির চিকিৎসকরা।

ডা. সেন বলেন, সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন দগ্ধ ছাত্রীর শরীর ৫ ঘণ্টা আকাশপথে ভ্রমণের অবস্থায় নেই। এজন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। অবস্থার উন্নতি হলেই বলা যাবে যে তাকে সিঙ্গাপুর নেয়া যাবে কি না।

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান। তিনি বলেন, ঢামেকের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা তাদের সাধ্যমতো চিকিৎসা দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীও অসুস্থ ছাত্রীর প্রতি মুহূর্তের খবর রাখছেন। চিকিৎসকরা মনে করছেন, সিঙ্গাপুর নিয়ে যেতে যে ভ্রমণটা করতে হবে তার ধকল সে সহ্য করতে পারবে না। সে কারণে আপাতত তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হচ্ছে না। কিছুটা সুস্থ হলে পাঠানো যেতে পারে।
nusrat 1
দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী যেন সুস্থ হয়ে উঠতে পারে সেই প্রার্থনা করতে দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান প্রতিমন্ত্রী। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আয়োজিত আরেক ব্রিফিংয়ে ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছিলেন, মাদ্রাসাছাত্রীর শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। তিনি বলেন, তার উন্নতিও নেই, অবনতিও নেই। তবে গত মঙ্গলবার করা অস্ত্রোপচারের কারণে তার শ্বাস নিতে আরাম হচ্ছে।

ঐ সময় ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, গত রাতে সিঙ্গাপুর থেকে ফোন করে ঐ ছাত্রীর আজকের (বুধবার) অবস্থা জানতে চেয়েছিলেন সেখানকার চিকিৎসকরা। সকালে তাকে দেখে এসেছেন তার চিকিৎসায় গঠিত বোর্ডের সদস্যরা। বাংলাদেশ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও পাঠানো হয়েছে। এখন তার চিকিৎসার বিষয় নিয়ে বৈঠক করছেন সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা। বৈঠকে কিডনি বিশেষজ্ঞ, আইসিইউ বিশেষজ্ঞসহ অন্য চিকিৎসকরা রয়েছেন। এক ঘণ্টা পর তারা তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন। তারপর বলা যাবে যে ঐ শিক্ষার্থীকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানো হবে কি না।
nusrat 1
দগ্ধ ঐ ছাত্রীকে সিঙ্গাপুর নিতেই হবে কি না তা জানতে চান এক সাংবাদিক। জবাবে ডা. সেন বলেন, বাংলাদেশে তাকে যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় তাকে সেই চিকিৎসাই দেয়া হবে। তবে সিঙ্গাপুরে পরিবেশটা ভালো পাওয়া যাবে। এখানে যেমন রোগীর অনেক চাপ, ওখানে সেটা নেই। এটাই সুবিধা। আরেক প্রশ্নের জবাবে বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক জানান, ঐ ছাত্রীর কিডনি ও ফুসফুস এখন পর্যন্ত কাজ করছে।

উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ-উদ-দৌলা ঐ শিক্ষার্থীকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় মেয়েটির মা বাদী হয়ে মামলা করেন। পরে ৬ এপ্রিল শনিবার ঐ শিক্ষার্থী মাদ্রাসা পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে অধ্যক্ষের অনুসারী কয়েকজন দুর্বৃত্ত হত্যার উদ্দেশ্যে তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তার শরীরের প্রায় ৭৫ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছিল ডাক্তাররা।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post