স্টাফ রিপোর্টার ও ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায় বিজিবির সাথে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে এলাকাবাসীর সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন বিজিবিসহ অন্তত ২৮ জন। হরিপুরে এক বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ভারতীয় গরু উদ্ধার করে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার সময় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও গ্রামবাসীর মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা হলেন হরিপুর উপজেলার রুহিয়া এলাকার নজরুলের ছেলে নবাব (৩৫), বহরমপুর এলাকার নুর ইসলামের ছেলে জয়নুল (১২) ও আব্দুর রহিমের ছেলে সাদেকুল (৩২)। তবে সাদেক (৪৫) নামে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বহরমপুর গ্রামের মাহাবুব আলী গত ৬ মাস আগে একটি গরু ক্রয় করেন। সেই গরু গতকাল মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় যাদুরানী বাজারে বিক্রি করার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। এ সময় বেতনা ক্যাম্পের বিজিবির সদস্যরা ভারতীয় গরু মনে করে ক্যাম্পে গরুটি নিয়ে যাওয়ার জন্য মাহাবুবের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে গেলে মাহাবুবের পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। পরে বিজিবি গুলি ছুড়লে যাদুরানী বাজারের উদ্দেশে আসা ২ জন পথচারীসহ ৪ জন নিহত হন। আহত হন বিজিবি সদস্যসহ অন্তত ২৮ জন।
হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্রে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, গুলিবিদ্ধ ১৫ জনের শরীর থেকে গুলি বের করে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের দিনাজপুর আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মো. মাসুদ দাবি করেন, বিজিবির একটি পেট্রল টিম ৪টি গরু সিজ করে ফেরার পথে চোরাকারবারীরা এলাকাবাসীকে নিয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ বিজিবির ওপর হামলা করে। তাদের অনুরোধ করা হলেও কোনো কথা শুনেনি। একপর্যায়ে তারা উত্তেজিত হয়ে বিজিবির অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ৪ জন বিজিবি সদস্য আহত হওয়ার পর কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করা হয়। এতেও পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় বাধ্য হয়ে বিজিবি গুলি ছোড়ে।
বিজিবি ঠাকুরগাঁও সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সামসুল আরেফিন বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে সীমান্ত হত্যা বেড়ে যাওয়ায় চোরাচালান ও অবৈধ অনুপ্রবেশের ব্যাপারে বিজিবি কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবির একটি টহল দল চাঁদগাঁওর বহরমপুরে হাবিবুর রহমানের বাড়ি থেকে ২টি ভারতীয় গরু উদ্ধার করে বেতনা ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছিলো। পথে ঐ বাড়ির নারীরাসহ এলাকার একটি সংঘবদ্ধ দল বিজিবির ওপর হামলা চালায়। আক্রমণে ২ বিজিবি সদস্য আহত হয়েছেন। এ সময় টহল দলের কমান্ডার জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি রাষ্ট্রীয় বাহিনীর কাজে বাধা না দেয়ার জন্য গ্রামবাসীকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা তার কথা না শুনে আক্রমণ করলে বিজিবি বাধ্য হয়ে গুলি চালায়। এ সময় প্রায় ২৮ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ১৫ জনকে দ্রুত হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেয়া হলে চিকিৎসক ২ জনকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকিদের উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়। অন্যরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
তবে আহত ও নিহতদের পরিবারের দাবি, গ্রাম থেকে গরু নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দিতে চাইলে বিজিবি অন্যায়ভাবে তাদের ওপর গুলি চালায়। যে বাড়ি থেকে গরুগুলো উদ্ধার করা হয় সেই বাড়ির হাবিবুর রহমানের ছেলে ইয়াকুব আলী অভিযোগ করে বলেন, গরুগুলো আমরা নিলাম থেকে কিনেছিলাম। বিজিবিকে নিলাম থেকে কেনার টোকেনও দেখিয়েছি। তারপরও বিজিবি টোকেনসহ আমাদের গরু নিয়ে যায়। তবে বিজিবি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা কোনও টোকেন দেখাতে পারেনি। গরুগুলো ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে আনা হয়েছে।
হরিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিরুজ্জামান জানান, নিহতরা হলেন উপজেলার রুহিয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে নবাব (৩৫), একই গ্রামের মৃত জহিরুদ্দিনের ছেলে সাদেক (৪৫) ও জয়নুল (১২)।