ঋণখেলাপি ও অর্থপাচারকারীদের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ হাইকোর্টের

অনিয়মকারী ও দায়ীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না, রুল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : গত ২০ বছরের ব্যাংকিং খাতের ঋণ খেলাপি ও অর্থপাচারকারীদের তালিকা করে তা প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং টাকা উদ্ধারে কেন একটি কমিশন গঠন করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। গতকাল বুধবার এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

রিটের শুনানির সময় আদালত বলেন, বাংলাদেশের সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকিং খাতে এরই মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে একটি নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। এই পরিস্থিতি খুব দ্রুত বন্ধ করতে হবে। অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করে একটি শক্তিশালী জায়গায় নিয়ে আসতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা যেমন জাতির মেরুদ-, অর্থ তেমনই একটি দেশের মেরুদ-, যার ওপর দেশ দাঁড়িয়ে থাকে।

আদালত আরও বলেন, সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকে নিয়ম-নীতি মেনে ঋণ দেয়ার কথা ছিল। যদি তা না মানা হয়, যারা যারা ঋণ গ্রহণ ও অর্থপাচার করেছেন, তাদের তালিকা এবং তাদের আত্মসাৎ করা অর্থ উদ্ধার করে একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে হবে। এছাড়া ঐ আত্মসাতের অর্থ দেশ কিংবা বিদেশের যেখানেই থাকুক না কেন, তা ফিরিয়ে আনতে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করতে হবে।

ডেপুটি এটর্নি জেনারেল বলেন, যারা ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন তাদের একটি তালিকা প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। আত্মসাৎ করা টাকা কোথায় তা জানার জন্য হাইকোর্ট থেকে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি ব্যাংকিং খাতে অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ অনুমোদনে অনিয়ম, প্রাইভেট ও পাবলিক ব্যাংকগুলোতে ব্যাংকঋণের ওপর সুদ মওকুফের বিষয়ে তদন্ত এবং তা বন্ধে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য কমিশন গঠন করার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ৫টি মন্ত্রণালয়ের সচিবদের একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছাড়াও নোটিশপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইআরপিবি) পক্ষে এ নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে ৭ দিনের মধ্যে ব্যাংকিং খাতে অনিয়মের বিষয় তদন্ত ও প্রতিরোধে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য ১৯৫৩ সালের ইনকোয়ারি কমিশন এ্যাক্টের অধীনে একটি কমিশন গঠনের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু সেই নোটিশের কোনও সদুত্তর না পেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post