অর্থনৈতিক রিপোর্টার :দেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক। অথচ ঈদ ঘিরে রাজধানীর অভিজাত বিপণি বিতান থেকে শুরু করে ছোট, বড় শপিংমলে নারীদের পোশাকসহ প্রায় পুরো বাজারটাই ভারতীয় পোশাকের দখলে। ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, পুরো বাংলাদেশের বাজার দখল করে নিচ্ছে ভারতীয় পোশাক। একটি ঈদে পোশাকের বাজার প্রায় ২৭ হাজার থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার পোশাক আসে শুধু ভারত থেকে। আর দেশি পোশাকের বাজার মাত্র ৬ হাজার কোটি টাকার মতো। বিক্রেতারা বলছেন, নিত্য-নতুন ডিজাইন আর কাপড়ের মান উন্নত হওয়ায় চড়া দাম হলেও এসব পোশাকের প্রতি বিশেষ আগ্রহ ক্রেতাদের। যদিও দেশি উদ্যোক্তারা বলছেন, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবেই মূলত বিদেশি পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন ক্রেতারা। কিন্তু গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বিদেশি সিরিয়াল নির্ভর পোশাকের চাহিদা অনেকটাই কম। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায়, যে দেশের প্রধান রফতানি আয় আসে এই তৈরি পোশাক থেকে, সে দেশের উৎসবকেন্দ্রিক পোশাকের বাজার কেন আমদানি নির্ভর? ক্রেতারা বলছেন, ঈদে সবাই চায় জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক কিনতে। অন্যরকম ফেব্রিকস আর বাহারি ডিজাইন চায় সবাই। নারী ক্রেতাদের একটি বড় অংশে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীরা, যারা নিজেদের পোশাক সবসময়ই চায় অন্যদের থেকে কিছুটা আলাদা হোক। আর এটারই সদ্বব্যবহার করেন বিক্রেতারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমাদের মার্কেটগুলোতে যা দেখা যায় তার ১০০ ভাগের মধ্যে ৯০ ভাগই ভারত থেকে আসা। ওদের পোশাকের গুণাগুণ কিছুটা ভালো হয় এবং নতুন মডেলের পোশাকও পাওয়া যায়। তারা জানান, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় ঈদকে কেন্দ্র করে প্রায় ২৭ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার বিদেশি পোশাক আমদানি হয়। এসব পোশাকের দামও হাঁকানো হয় ১৫শ থেকে শুরু করে মানভেদে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। যদিও অন্যান্য বছর পোশাকের নামে ভারতীয় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের প্রভাব থাকলেও এবছর তেমনটি চোখে পড়েনি।
এ প্রসঙ্গে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের এক শো-রুমের দায়িত্বে থাকা বিক্রেতা আজাদ আবুল কালাম দৈনিক জনতাকে বলেন, আমাদের দেশ পোশাক তৈরিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও দুই ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে বিদেশি পোশাকের একটি আধিক্য থাকে, যেটা বহুকাল ধরেই চলে আসছে। বিশেষ করে ভারতীয় পোশাকের মতো ডিজাইন আমাদের দেশে খুব কমই তৈরি হয়। আর ওরা ওদের টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানগুলোর মতো করে কম বয়সীদের কথা মাথায় রেখেই বিভিন্ন পোশাক রফতানি করে। আমাদের ক্রেতারা অনেকেই ঈদের সময়ে ভারত কিংবা থাইল্যান্ড চলে যান, ওখান থেকে ঈদ শপিং করে আনেন। আমাদের দেশেও ঠিক ওদের মতো বিপণি বিতান রয়েছে, ফলে আমরা যদি নিজেরাই সেসব কিনে বিক্রি করতে পারি তবে এতে কিন্তু আমাদের তেমন ক্ষতি হয় না। যদি দেশীয় উদ্যোক্তারা এ বিষয়ে নজর দেন তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে এই ট্রেডিশন বন্ধ হবে।
ক্রেতারা বলেন, আকাশ সংস্কৃতির যুগে সবকিছুই হাতের মুঠোয়। আমরা টিভিতে আরাবিয়ান পোশাক দেখছি আবার কখনও ইন্ডিয়ান পোশাক দেখছি। হঠাৎ মনে হলো আমি তাদের পোশাক কিনবো। আর এমনটা ইচ্ছে হলে বিক্রেতারাও চাহিদামাফিক পণ্য আমদানি করতে অনেকটাই বাধ্য হন।
তবে স্বস্তির বিষয় হলো, বিদেশি পোশাকের ভিড়ে কিছুটা হলেও স্থান দখলের চেষ্টা করছে দেশীয় কয়েকটি ব্র্যান্ড। কিন্তু পোশাক তৈরির প্রধান উপকরণ ফেব্রিকস আমদানি নির্ভর হওয়ায় দেশীয় পোশাক আসলেই কতটা দেশি হতে পেরেছে সে প্রশ্ন থেকেই যায়। তৈরি পোশাকের উপর ভর করে মেইড ইন বাংলাদেশের স্বীকৃতি এখন বিশ্বব্যাপী। এথচ এদেশে উৎসব কেন্দ্রিক পোশাকের বাজার এখনো বিদেশি পণ্যের দখলে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অর্জনে কাপড়ের মান ও ডিজাইনে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে উদ্যোক্তাদের।