কৌশিক আহমেদ শিমুল, : কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং প্রধান ফসল ধান-পাট ও গমের দাম না পেয়ে লোকসান ঠেকাতে মেহেরপুরের মানুষ বাগান তৈরিতে ঝুঁকে পড়েছে। গাছ লাগানো লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছর কৃষি জমিতে গড়ে উঠছে ফলজ ও বনজ গাছের বাগান। ফলে দ্রুত কমে যাচ্ছে আবাদী জমির পরিমাণ।
জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, নতুন নতুন বাগান আর বসত বাড়ি গড়ে ওঠার কারণে প্রতি বছর শতকরা ২ ভাগ হারে আবাদী জমি কমে যাচ্ছে। ফলে মেহেরপুরে খাদ্য ঘাটতির আশংকা করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। আবাদী জমি সংরক্ষণে সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন করে বাস্তব প্রয়োগের পাশাপাশি কৃষি উপকরণের দাম কৃষকের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকলে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
মেহেরপুর জেলায় মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ৬১ হাজার হেক্টর। কিন’ প্রতি বছরই কমে যাচ্ছে আবাদী জমির পরিমাণ। তবে কি পরিমাণ কমেছে তার সঠিক হিসাব নেই কৃষি বিভাগের কাছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে উৎপাদিত খাদ্য জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্নস’ানে সরবরাহ করা হয়। জমি উবর্র ও সমতল হওয়ায় এ জেলায় সব ধরণের ফসলের উৎপাদন ভাল হয়। ২৫-৩০ ভাগ আবাদী জমিতে বছরে ৩ বার ফসল উৎপাদন হয়। বর্তমানে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে চাষাবাদ শুরু হওয়ায় একটি আবাদের সাথী ফসল হিসেবে অন্য ফসলের চাষ হচ্ছে ব্যাপক হারে। কিন’ বীজসহ কৃষি উপকরণের আকাশ ছোঁয়া দাম ও মজুরি খরচ বৃদ্ধির কারণে অনেকে আবাদ ছেড়ে আবাদী জমিতে গড়ে তুলছেন ফলজ ও বনজ গাছের বাগান।
মেহেরপুর কাজি অফিস পাড়ার হারুন শেখসহ অনেক বাগান মালিক জানান, বাগানে শ্রম দিতে হয় কম, খরচও কম। মাঝে মাঝে একটু পরিচর্যা করলেই হয়। আবার ব্যবসায়ীরা ফলজ বাগানের ফল আগাম কিনে নেন। ফলে এককালীন মোটা অংকের টাকা পাওয়া যায়। আর আগাম বিক্রি করলে ব্যবসায়ীরাই বাগানের পরিচর্যা করে। যার কারণে অনেকেই নিজের চাহিদা অনুযায়ী জমিতে ফসলের চাষ করে বাকি জমিতে বাগান গড়ে তুলছেন। তাছাড়াও প্রবাসীরা আবাদী জমি কিনে বাগান করে ফেলে রাখছেন। পাশাপাশি গড়ে উঠছে নতুন নতুন বসত বাড়ি। এতে গড়ে প্রতি বছর প্রায় এক হাজার হেক্টর আবাদী জমি কমে যাচ্ছে। এভাবে কমতে থাকলে আগামী ১০ বছর পর জেলায় খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে আশংকা করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞসহ সচেতন মহল। মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম কামরুজ্জামান জানান, বাগান গড়ে উঠার কারণে জেলায় আবাদী জমি কমে যাচ্ছে ঠিক। তবে ফলজ বাগান গড়ে ওঠার কারণে পুষ্টির চাহিদা মিটছে এবং মানুষ আর্থিকভাবে সচ্ছল হচ্ছে। তবে পতিত জমিতে আম, কাঁঠাল ও লিচু এবং সাগুয়ান, মেহগনি ও শিশুসহ বিভিন্ন অর্থকরী বনজ বাগান করার পরামর্শ দিচ্ছি। কামরুজ্জামান আরো জানান, মাঠের জমিতে পেয়ারা, কুল, কাগজি লেবু ও কলা চাষকে স’ায়ী বাগান বলা যাবেনা। কারণ এগুলো মৌসুমী ফসলেরই মত মাত্র কয়েক বছর মেয়াদী। এসব বাগানে সাথী ফসল হিসেবে আলু-কুমড়া, আদা-হলুদ ইত্যাদি ফসল উৎপাদন করা যায়। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বাগানে সাথী ফসল চাষ করার জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।