কুমিল্লায় সাড়ে ৪ হাজার কৃষকের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা

কুমিল্লা থেকে বারী উদ্দিন আহমেদ বাবর  : কৃষি ঋণের টাকা শোধ করতে না পারায় কুমিল্লায় সাড়ে চার হাজার কৃষকের নামে সার্টিফিকেট মামলায় ইতোমধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। জেলার ১৭টি উপজেলায় ছয়টি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে বিতরণকৃত ঋণের ১২ কোটি ৪৮ লাখ ৭১ হাজার টাকা আদায়ে মোট ৪৫ হাজারটি সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করা হয়।
বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকের পক্ষ থেকে জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসার আদালতে এই ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে ৫১৩টি মামলা দায়ের করেন। ব্যাংকওয়ারী খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে সোনালী ব্যাংকের ৩০ লাখ ৯৩ হাজার টাকা আদায়ে মামলা ১১১টি। জনতা ব্যাংকের ২৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা আদায়ে মামলা ১২০টি, অগ্রণী ব্যাংকের ২৩ লাখ ৮৬ হাজার টাকা আদায়ে মামলা ২০৩টি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ১১ কোটি ৫২ লাখ ৯৬ হাজার টাকা আদায়ে মামলা

৪ হাজার ৩১টি, রূপালী ব্যাংকের ২ লাখ ৩১ হাজার টাকা আদায়ে মামলা ২৩টি, কর্মসংস্থান ব্যাংক ১৫ লাখ ২৪ হাজার টাকা আদায়ে মামলা ১২টি এবং বিআরডিবি তাদের ৬১ হাজার টাকা আদায়ে ১২টি মামলা করেছে। লাকসাম উপজেলার আমদুয়ার গ্রামের কৃষক আবদুল কাদের বলেন, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান দেশ, কৃষকরা ঋণ নিয়ে যখন পরিশোধ করতে পারেনা তখনই তাদের ঘাড়ে নেমে আসে সার্টিফিকেট মামলার খড়গ। অথচ বিত্তশালীরা হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে সময়মতো পরিশোধ না করে পার পেয়ে যাচ্ছে। কৃষকের রক্তচোষা টাকায় বাড়ি গাড়ির মালিক হচ্ছে। এদিকে আমরা কৃষি পণ্যের সঠিক মূল্য পাচ্ছিনা। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। যেকারনে ইচ্ছা থাকার পরও ঋণের টাকা পরিমোধ করতে পারে না। এছাড়া ঋণ গ্রহণের সময় অনেক ক্ষেত্রে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের লোকদের বাড়তি টাকা দিতে হয়। আবার এসব ব্যাংক কর্মকর্তারাই কৃষকদের নেয়া ১০-২০ হাজার টাকা পরিশোধের দেরী হলে কিংবা পরিশোধ করতে না পারলে, তাদের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করান। তিনি আরও বলেন, ঋণ আদায়ে এদের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে মানবিক আচরণ করা উচিত। তিনি কৃষকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সার্টিফিকেট মামলাগুলো তুলে নিয়ে ঋণের সুদ মওকুফ ও ঋণ মওকুফের দাবি জানান।

জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলার পানকরা গ্রামের কৃষক অজি উল্লাহ বলেন, সামান্য কৃষিঋণের টাকা পেতে দালাল ও ব্যাংকের লোকদের টাকা পয়সা দিতে হয়। ব্যাংকের এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে গত বছর আমরা বেশ কয়েকজন কৃষক একত্রিত হয়ে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈদুল আরীফের নিকট অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু এর কোন সমাধান মেলেনি। তিনি আরও বলেন, সময়মতো কৃষি ঋণ পাওয়া যায় না বলে ঋণের টাকা অন্য খাতে খরচ হয়ে যায়। ঘরবাড়ির দলিল ব্যাংকে জমা রেখে নেয়া ঋণ কৃষক নানা সমস্যার কারণে সময়মতো পরিশোধ করতে পারে না। ঋণ গ্রহীতাকে সময় দিলে তারা অবশ্যই ঋণের টাকা পরিশোধ করবে বলেও দাবি করেন তিনি। এজন্য তিনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে মানবিক হওয়ার আহ্বান জানান।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post