ডিআইজি মিজানের বিপুল সম্পদ ও নারীঘটিত অপকর্ম নিয়ে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ

ডিআইজি মিজানের

এক সংবাদ পাঠিকাকে হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়ার কথা স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিআইজি) মিজানুর রহমান। গতকাল দুদকে তাকে তার সম্পদ ও নারীঘটিত অপকর্ম নিয়ে (ডিআইজি মিজান) ৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের উপপরিচালক ও অনুসন্ধান কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

ফোনে নারী সাংবাদিককে হুমকির ব্যাপারে পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান বলেছেন, একজন ভদ্র মহিলার সাথে কনভারসেশন হয়েছে। তার জন্য ‘আই অ্যাম স্যরি’। আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে টানা সাত ঘণ্টা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দুদকের সেগুনবাগিচা কার্যালয়ে অভিযোগ অনুসন্ধানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রসঙ্গত, গত ২৫ এপ্রিল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ডিআইজি মিজানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে আসেন তিনি। জানুয়ারিতে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে এক নারীকে বিয়ে করার অভিযোগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনারের (ডিআইজি) পদ থেকে মিজানুর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়। বর্তমানে তিনি পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত রয়েছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে এক সংবাদ উপস্থাপিকাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি ও ৬৪ টুকরা করে হত্যার হুমকি দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। সংবাদ পাঠিকাকে হুমকি দিয়ে তিনি বলেন তোকে ৬৪ টুকরা করে ৬৪ জিলায় পাঠাব এবং মাথা রাখব জিরো পয়েন্টে। এই অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ডিআইজি মিজান বলেন, সাংবাদিক একজন ভদ্রমহিলার সাথে আমার কনভার্সেশন হয়েছে। এজন্য আই অ্যাম সরি। এর জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। নারী কেলেঙ্কারির বিষয়ে ডিআইজি মিজান বলেন, এ বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদন্তাধীন রয়েছে। এটা উনারাই ভালো বলতে পারবেন। উনার বিষয়টি কতটুকু প্রমাণিত হয়েছে, কতটুকু হয়নি। অবৈধ সম্পদ অর্জনের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমার সম্পদের ব্যাপারে দুদক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আমার ট্যাঙ্ ফাইলের বাইরে কোনো সম্পত্তি নেই তাদেরকে জানিয়েছি। এ বিষয়ে আপনারা দুদকের কর্মকর্তাদের কাছে শুনবেন। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।

সিলেটে পুলিশ লাইন্সের পিছনে ইকো পার্কের জমি দখল করে বাগান তৈরির ব্যাপারে তিনি বলেন, এ বিষয়ে দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বক্তব্য দিয়েছেন। তারা বিষয়টি ভেরিফাই করবেন। মিজানের জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে দুদক সচিব শামসুল আরেফিন সাংবাদিকদের বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ডিআইজি মিজান তার ইনকাম ট্যাঙ্ ফাইল সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। তার দেয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করবে আমাদের অনুসন্ধানকারী দল। তিনি বলেন, তার কাছে সম্পদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। পরে তাকে আবারো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দুদক সচিব বলেন, প্রাথমিকভাবে তার আয়ের সাথে সম্পদের অসামঞ্জস্য দেখেই তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করা হয়। অনুসন্ধান চলমান তাই এখন এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়। দুদক সূত্রে জানা যায়, ডিআইজি মিজান পুলিশের উচ্চ পদে থেকে তদবির, নিয়োগ, বদলিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ আছে। চাকরি জীবনে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা উপায়ে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার নামে-বেনামে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি রয়েছে। একাধিক ব্যাংক হিসাবে রয়েছে বিপুল অর্থ ও ফিঙ্ড ডিপোজিট। এমনকি দেশের বাইরে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, দুদকের অনুসন্ধানে ডিআইজি মিজানের চাকরিজীবনে যাবতীয় আয়-ব্যয়, এনবিআরে দেয়া সম্পদের তথ্য, নারীঘটিত বিষয়ে অর্থ খরচের পেছনে টাকার উৎস, বিদেশে পরিবার-পরিজনের জন্য পাঠানো অর্থসহ পুরো তথ্য বের করে আনার চেষ্টা করছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা। অপর একটি সূত্র জানায়, ডিআইজি মিজান পুলিশের উচ্চপদে থেকে তদবির, নিয়োগ, বদলিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে নানা উপায়ে শত কোটি টাকার মালিক হন বলে দুদকে অভিযোগ আসে। এই অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য গত ১০ ফেব্রুয়ারি দুদকের উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারীকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করে দুদক।

চাকরিজীবনে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা উপায়ে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার নামে-বেনামে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি রয়েছে। একাধিক ব্যাংক হিসাবে রয়েছে বিপুল অর্থ ও ফিঙ্ড ডিপোজিট। এমনকি দেশের বাইরে অর্থপাচারেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ডিআইজি মিজানুর রহমান ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ বছরের জানুয়ারিতে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়। দ্বিতীয় বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রী মরিয়ম আক্তারকে গ্রেফতার করানোর অভিযোগ ওঠে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনেরও অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের প্রমাণ পায় পুলিশের তদন্ত কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে প্রত্যাহার করা হয়। সর্বশেষ মিজানের বিরুদ্ধে এক সংবাদ পাঠিকা প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ তুলেছেন।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post