ভাবমূর্তি ফেরাতে পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপক সংস্কার পরিকল্পনা=১শ ওসি এবং ৫শ এসআইয়ের তালিকা তৈরি

এফএনএস : দুর্নীতি ও হয়রানির কারণে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে পুলিশ প্রশাসন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এবং পুলিশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে পুলিশ সদর দফতর নানা স্থান থেকে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের ভিত্তিতে তালিকা তৈরি করে সংস্কার পরিকল্পনা করছে। তাছাড়া সদর দফতরের কঠোর নজরদারিতে আনা হয়েছে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পোস্টিং। আর থানা পর্যায়ে যানজট তৈরি হওয়ার প্রেক্ষাপটে সেখানেও ট্রাফিক পুলিশ দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তাছাড়া দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ প্রশাসন গড়তে ইতিমধ্যে দুর্নীতিবাজ ৬২০ কর্মকর্তার নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আর জনবান্ধব ও সেবাবান্ধব পুলিশিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপক সংস্কারেরও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পুলিশ বাহিনীতে যে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা কার্যকর হলে নিয়োগ-পদোন্নতি-পোস্টিংয়ে অবৈধ অর্থ লেনদেন হবে না। টিএ বিল তুলতেও কনস্টেবলদের কোনো ঘুষ দিতে হবে না। থানা ঘিরে রাজনীতিবিদ, পুলিশ ও প্রভাবশালীদের সিন্ডিকেটও

ভেঙে দেয়া হবে। তাতে থানার সার্বিক পরিবেশ উন্নত হবে। মামলা নিয়ে কোনো পুলিশ সদস্য কাউকে হয়রানি করতে পারবে না। ইতিমধ্যে সারাদেশের দুর্নীতিবাজ ২০ এসপি, ১০০ ওসি এবং ৫০০ এসআইয়ের তালিকা প্রস্তুত করেছে পুলিশ সদর দফতর। তাছাড়া বিদ্যমান পাবলিক হেয়ারিং বা ওপেন হাউস ডে কার্যকর করা হবে। আর পুলিশের সব অফিস থাকবে অনলাইন ও সিসিটিভির নিয়ন্ত্রণে। যাতে এসপি অফিসে বসে ওসিরা কী করছেন তা দেখতে পারেন। একইভাবে এসপি অফিসে কী হচ্ছে ডিআইজি অফিসে বসে তা দেখতে পারবেন। আবার ডিআইজি অফিসে কী হচ্ছে তা পুলিশ সদর দফতরে বসে দেখতে পারবেন পুলিশপ্রধান। সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে কার্য সম্পাদন করার জন্য ৭ জন কর্মকর্তার জন্য একজন করে কমান্ডিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হবে। ওসব ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতর থেকে কিছু নির্দেশনা শিগগিরই সারাদেশের রেঞ্জ ডিআইজি ও এসপিদের কাছে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, পুলিশ প্রশাসনে সংস্কারের অংশ হিসেবে ৭ জন কর্মকর্তার জন্য একজন করে কমান্ডিং অফিসার নিয়োগের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। একজন এসপি সর্বোচ্চ ৭ জন অতিরিক্ত এসপিকে কমান্ড দিতে পারবেন। একইভাবে একজন ডিআইজি সর্বোচ্চ ৭ জন অতিরিক্ত ডিআইজিকে কমান্ড দিতে পারবেন। আর থানাগুলোতে পুলিশ, রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালীদের যে সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে, তা ভেঙে দেয়া হবে। পাশাপাশি রাজধানীসহ সারা দেশের থানাগুলোর পরিবেশ উন্নত করা হবে। যাতে মানুষ থানায় গিয়ে স্বস্তিবোধ করে। থানাগুলোতে সাধারণত প্রতিদিন ৭-৮টি টহল দল কাজ করে। কিন্তু থানায় দুই বা তিনটির বেশি টহল গাড়ি নেই। সেক্ষেত্রে ৫-৬টি গাড়ি ভাড়া বা রিকুইজিশন করতে হয়। আর পুলিশের যে কর্মকর্তা গাড়ি ভাড়া বা রিকুইজিশন করেন, ওই কর্মকর্তাকেই গাড়ির তেল থেকে শুরু করে সব খরচ বহন করতে হয়। পুলিশ সদর দফতর পরিকল্পনা করছে, যাতে কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে সরকারি কাজে ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি ভাড়া করতে না হয়।

সূত্র আরো জানায়, আমলযোগ্য অপরাধে মামলা করতে কেউ থানায় এলে ওসি সেই মামলা নিতে বাধ্য। কিন্তু অনেক সময় সাধারণ মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয়। শুধু মামলা করা নয়, তদন্তের আপডেট জানতে ও চার্জশিট দেয়া পর্যন্ত মানুষকে হয়রানি করা হয়। ওসব হয়রানি দূর করতে ডিজিটাল মামলার কথা ভাবা হচ্ছে। মূলত পুলিশের সংস্কারের জন্য মাঠপর্যায়ে অনেক গণমুখী উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পুলিশের এ সংস্কার উদ্যোগকে বিশেষজ্ঞরাও ইতিবাচকভাবে দেখছেন । তাদের মতে, সার্বিক বিষয়ে পুলিশের সংস্কার হওয়া উচিত। যারা বিধিমালা লংঘন করবে, অনৈতিক কাজে জড়াবে, অবৈধ লেনদেনে যুক্ত হবে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। কারণ সুশাসন মানেই আইনের শাসন। পুলিশের পক্ষ থেকে যেসব সংস্কার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেগুলো কার্যকর হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

এদিকে এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অ্যাফেয়ার্স) মনিরুজ্জামান জানান, সারা দেশে থানাগুলোতে ব্যাপক সংস্কার আনার চিন্তা-ভাবনা চলছে। জনবান্ধব ও সেবাবান্ধব পুলিশিং চালু করতে পুলিশ সদর দফতর থেকে অতীতে নানা ধরনের নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ওসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়নি। সেগুলো যাতে যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হয়, সে বিষয়ে পুলিশ সদর দফতর এখন কঠোর অবস্থানে আছে। আর কতিপয় দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই দুর্নীতি বন্ধ হবে না। সেজন্য সিস্টেমের পরিবর্তন করতে হবে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী জানান, কোনো ব্যক্তির অপরাধের দায় পুলিশ বাহিনী নেবে না। কেউ অপরাধ করলে তাকে অপরাধী হিসেবেই দেখা হবে। সে লক্ষ্যেই কাজ করা হচ্ছে। সদর দফতরের বিভিন্ন উইং প্রধানকে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর পুলিশের সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিভিন্ন ইউনিট এ নিয়ে কাজ করছে। পুলিশের যেসব সমস্যা আছে, সেসব চিহ্নিত করা হচ্ছে। এরপর কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post