তিন দিনের ব্যবধানে উন্মোচিত হলো শিশু মীম হত্যা মামলার প্রকৃত রহস্য।

কুমিল্লা প্রতিনিধি : কুমিল্লার চান্দিনায় হত্যাকা-ের মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে উন্মোচিত হলো শিশু মীম হত্যা মামলার প্রকৃত রহস্য। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে মূল হোতা ওমর ফারুক (১৯)কে আটক করার পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় সে। ওমর ফারুক চান্দিনা পৌরসভার বেলাশহর গ্রামের মোস্তফা কামালের ছেলে। পেশায় গাড়ি চালক। রোববার (১০ ডিসেম্বর) রাতে তাকে আটক করার পর ১১ ডিসেম্বর সোমবার দুপুর ২টায় ম্যাজিস্ট্রেট বিপ্লব কুমার দেবনাথ এর আদালতে হাজির হয়ে সে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয়।

তার স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দিতে জানা যায়, নিহত শিশু সুবর্ণা আক্তার মীম (৬)-এর পার্শ্ববর্তী বাড়ির বাসিন্দা ওমর ফারুক। সে একটি প্রাইভেটকার ভাড়ায় চালাতো। ঘটনার দিন গত ৬ ডিসেম্বর (বুধবার) সকাল থেকে ওমর ফারুক তার প্রাইভেটকারটি পরিষ্কার করছিল। গাড়ি দেখে মীম এগিয়ে গেলে তাকে গাড়িতে চড়ানোর প্রলোভন দেখায় সে। মীমকে দিয়ে পুকুর থেকে পানি সরবরাহ করিয়ে গাড়ি পরিষ্কার করে চালক ওমর ফারুক। দুপুর ১২টার কিছু পর গাড়ি পরিষ্কার শেষে ওমর ফারুক তার কথামত মীমকে গাড়িতে উঠিয়ে বেলাশহর আরএনআর ব্রিক্স ফিল্ড সংলগ্ন স্থানে এনে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। এসময় মীম চিৎকার করে অচেতন হয়ে পড়লে গাড়ি চালক ওমর ফারুক তাকে ওড়না দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। পরে গাড়ির পিছনের বক্সে লুকিয়ে রেখে গাড়িটি তার গ্যারেজে রেখে দেয়। প্রায় সাত ঘণ্টা শিশুটির মরদেহ গাড়িতে থাকার পর সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৭টায় গাড়িযোগে পার্শ্ববর্তী থানগাঁও গ্রামের মাস্টার বাড়ি সংলগ্ন একটি খালপাড়ে শিশু মীম এর মরদেহ ফেলে আসে। বিষয়টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে ওই গাড়ি চালক তার গোপন একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে শিশু মীম এর পিতা কোরবান আলীকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে মুহূর্তের মধ্যে মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে সীম কাডটি ফেলে দেয়। চান্দিনা থানার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই কল লিস্টের সূত্র ধরে চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ, উপ-পরিদর্শক (এস.আই) স্বপন কুমার সরকার ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এস.আই) ডালিম কুমার মজুমদার সহ ‘টিম চান্দিনা’ অভিযান চালিয়ে উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের বদরপুর-মেহার গ্রাম থেকে তাকে আটক করার পর এ তথ্য উন্মোচিত হয়। চান্দিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ জানান, মূলত যৌন তাড়নায় গাড়ি চালক ওমর ফারুক এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে।

এর আগে নিহতের মা খাদিজা আক্তার সিমু বাদী হয়ে মীম এর সৎ মা লাভলী আক্তার (৩৫) ও তার ছোট ভাই দেবিদ্বার উপজেলার বাগুর গ্রামের মোস্তফা সরকারের ছেলে সালাউদ্দিন সরকার (৩২)কে আসামী করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বাদির লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সৎ মা ও মামাকে আটক করে বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছিল। উল্লেখ্য, গত ৬ ডিসেম্বর বুধবার দুপুর ১২টার পর থেকে শিশু মীমকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না তার পরিবার। পরদিন ৭ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে পার্শ্ববর্তী গ্রামের থানগাঁও ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় শিশু মীম এর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

Post a Comment

Previous Post Next Post