কোচিং বাণিজ্য ঠেকাতে 'শিক্ষা আইন' জরুরি

বিশেষ প্রতিনিধি : দেশের রাজধানীতে শ্রেণীকক্ষের বাইরে অতিমাত্রায় কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের ঠেকাতে ‘শিক্ষা আইন’ জরুরি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, কোচিং বাণিজ্যে জড়িত এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। আর এ জন্য প্রয়োজন শিক্ষা আইন। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলছেন, এই আইনটি খুব শিগগিরই হতে যাচ্ছে।
এদিকে চরম আতঙ্কে রয়েছে শ্রেণীকক্ষের বাইরে অতিমাত্রায় কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকরা। ইতোমধ্যে কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের একটি তালিকা তৈরি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের তালিকায় রাজধানীর ২১টি নামী স্কুলের ৫শ ২২ শিক্ষকের নাম উঠে এসেছে। তালিকা অনুযায়ী তাদের দ্রুত রাজধানীর বাইরে বদলি করার সুপারিশও করেছে দুদক।

দুদকের সুপারিশের পর থেকেই আতঙ্কে রয়েছেন কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকরা। ইতোমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর এবং দুদকে ভিড় লেগেছে ঐ তালিকায় নিজের নাম আছে কি না দেখার জন্য। আবার কেউ কেউ তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেয়ার জন্য তদবির শুরু করেছেন। আর তদবিরবাজরাও এই সুযোগে শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থ হাতানোর কাজে লিপ্ত রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্য, কোচিং বাণিজ্য ও নিয়োগ বাণিজ্যের নামে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের একটি অভিযোগ তদন্ত শুরু করে দুদক। দুদকের পরিচালক মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি দল তদন্ত শেষে সম্প্রতি কমিশনের কাছে শিক্ষকদের তালিকাসহ প্রতিবেদন দাখিল করেছে। দুদকের ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে অতিমাত্রায় কোচিং বাণিজ্যে জড়িত ঐসব শিক্ষকরা ১০ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ বছর পর্যন্ত একই বিদ্যালয়ে রয়েছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতার পাশাপাশি কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত থেকে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অর্থ উপার্জন করছেন। দুদকের সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত থাকলে তার এমপিও স্থগিত, বাতিল, বেতন-ভাতাদি স্থগিত, বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, বেতন এক ধাপ অবনমিতকরণ, সাময়িক বরখাস্ত ও চূড়ান্ত বরখাস্ত করা যেতে পারে। এমপিওবিহীন প্রতিষ্ঠান কোচিং করালে এমপিও স্থগিত ছাড়া বাকি সব শাস্তি তার জন্য প্রযোজ্য হবে। এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরিচালনা পর্ষদ ব্যবস্থা না নিলে সরকার পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিতে পারেন।

একইসাথে প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের স্বীকৃতি বাতিল ও অধিভুক্তি বাতিল করতে পারেন। আর সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে বিধিমালা ১৯৮৫ অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। কোচিং বাণিজ্য কমাতে হলে জড়িত শিক্ষকদের এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে বা শাখা দিবা থেকে প্রভাতী কিংবা প্রভাতী থেকে দিবা শাখায় নির্দিষ্ট সময় অন্তর বদলি করা দরকার।

এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষা আইন না থাকায় কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। জড়িত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এসব শিক্ষকের ‘শিক্ষা আইনে’র আওতায় আনা হবে নাকি প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারকে এ ব্যাপারে আইন করে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাছাড়া বর্তমান পাঠদান পদ্ধতি এবং জিপিএভিত্তিক প্রতিযোগিতা বন্ধ না করা হলে অভিভাবকরাও আপত্তি তুলতে পারেন।

এদিকে দুদকের তালিকা তৈরির প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে একটি গোয়েন্দা সংস্থা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের কোচিং বাণিজ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের তালিকা পাঠিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে। ঐ তালিকা এবং দুদক নিজস্ব তদন্ত করে এসব শিক্ষকের তালিকা করা হয়েছে এবং কোচিংয়ের সাথে যুক্ত থাকার প্রমাণ রয়েছে দুদকের হাতে।

এ ব্যাপারে মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর এসএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, দুদকের ঐ তালিকার কথা আমি শুনেছি। তবে এখনও আমার হাতে এসে পৌঁছেনি। কোচিংয়ের সাথে জড়িত শিক্ষকদের বদলিসহ যেসব সুপারিশ করা হয়েছে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দুদকের তালিকায় রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি ২১টি স্কুলের কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষক স্থান পেয়েছে। স্কুলগুলো হলো- আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল মডেল স্কুল, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, ভিকারুননিসা নূন স্কুল, উইলস লিটলস ফ্লাওয়ার স্কুল, ধানমন্ডি গভ: বয়েজ হাই স্কুল, ধানমন্ডি সরকারি বালিকা স্কুল, গর্ভনমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, শেরে বাংলা নগর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, শেরে বাংলা নগর বালক স্কুল, মিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মণিপুর স্কুল, আজিমপুর গভর্নমেন্ট হাই স্কুল, কাকলি হাই স্কুল, উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট, ন্যাশনাল বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়, আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, মাইলস্টোন কলেজ, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ও বিসিআইসি কলেজ।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post