চায়ের দোকানের মত গড়ে উঠেছে মাদক পয়েন্ট বৃহত্তর খুলনাঞ্চল মাদকের বিষাক্ত ছোবল

pic-11-10-17

বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো:বৃহত্তর খুলনাঞ্চল মাদকের বিষাক্ত ছোবলে এখন ক্ষত বিক্ষত। কিশোর তরুন যুবক আর বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ নেশায় আসক্ত। ভারত আর মিয়ানমার থেকে অনাগ্রা ও ইয়াবা আসছে প্রতিনিয়ত। শহর বন্দর থেকে গ্রামের প্রত্যনত্ম অঞ্চলে মাদকের বিশাল নেটওয়ার্ক। হাত বাড়ালেই মাদক। দুশ্চিনত্মায় রাতের প্রহর কাটেনা অভিভাবকদের। চায়ের দোকানের মত গড়ে উঠেছে এলাকায় এলাকায় মাদক পয়েন্ট। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হোম ডেলিভারী হচ্ছে ইয়াবা সহ নানা মাদকদ্রব্য। নারকোটিক্‌্র ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ কেউ সুবিধা নিচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। সেল্টার রয়েছে রাজনৈতিক নেতাদের। কোনভাবেই এই ভয়বহ মাদকের যাত্রা থামানো যাচ্ছে না।

সূত্রমতে, প্রভাবশালীদের ছাত্রছায়ায় ফেন্সিডিলের পাশাপাশি বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে বাণের জলের মত আসছে অনাগ্রা ও ইয়াবা নামক ট্যাবলেট। ইয়াবা এবং অনাগ্রা রাজধানী সহ বিভিন্ন স’ানে অধিক পরিচিত হলেও বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে নেশার জগতে এটি এখন হটকেক। মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ও ভারত থেকে অনাগ্রা স্মাগলিং হয়ে প্রবেশ করছে খুলনা বাগেরহাট ও সাতড়্গীরা অলিতে গলিতে। সিন্ডিকেটের পৃষ্ঠপোষক ও আমদানীকারকরা মাসে কোটি টাকার বাণিজ্য করছে।
নারকোটিক্স এবং আইন প্রয়োগকারী সংস’ার কতিপয় সদস্যরা এ সেক্টর থেকে প্রতিমাসে আদায় করছে লাখ লাখ টাকা। প্রভাবশালী এবং কথিত রাজনীতিবিদদের ড্রইং রম্নমেও ঐ ভাগের টাকা পৌছে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এর নিকট বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের প্রায় শতাধিক মাদক সম্রাটের তালিক রয়েছে তারা বীরদর্পে এ ব্যবসা চালিয়ে রাতারাতি কোটি টাকার মালিক সেজেছে। অথচ তাদের বিরম্নদ্ধে অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস’াই নিতে পারছেনা সংশ্লিষ্ট এ বিভাগটি। বিষয়টি নিয়ে খুলনা সদরের সাবেক সংসদ সদস্য নজরম্নল ইসলাম মঞ্জু সমপ্রতি কেএমএসএস আয়োজিত মাদক সম্পর্কিত এক সেমিনারে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রাজপথের এ নেতা প্রকাশ্যেই মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্তা ব্যক্তিদের সামনেই তাদের দায়িত্বের অবহেলার কথা তুলে ধরেন এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস’া গ্রহণের নির্দেশ দেন। খুলনার সিটি মেয়র মনিরম্নজামান মনি এ ব্যাপারে বিভিন্ন সভা সমাবেশে মাদকের বিরম্নদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখলেও মুলত তা কোন কাজে আসছে না। যদিও খুলনার পুলিশ ও ভ্রাম্যমান আদালত প্রায় প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য ও মাদকসেবীদের আটক ও নেশার দ্রব্য উদ্ধার করেছেন। কিন’ তারপরেও নারকোটিক্স বিভাগ এ ধরণের একটি সফলতাও দেখাতে পারেনি। সমপ্রতি দু’দফা ইয়াবা এবং অনাগ্রার এক দফা চালান আটক হয়েছে। এরপর আর তোড়জোড় নেই। কিন’ কেন? এ প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছেনা খুলনাঞ্চলের মানুষ।
এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক জানান, অনেক সমস্যা রয়েছে নারকোটিক্সের। জনবল এবং যানবাহন সংকটের কারণে আমরা মাদক সম্রাটদের গ্রেফতার করতে পারছিনা। তবে সার্বড়্গনিকভাবে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কিন’ খুলনার সচেতন নাগরিক নেতারা বলছেন, নারকোটিক্স তাদের কর্মকান্ডে মোটেও আনত্মরিক নয়। তারা শুধু চাকুরীর জন্য কতিপয় রম্নটিন ওয়ার্ক এবং লোক দেখানোর জন্য কিছু মামলা এবং উদ্ধার কর্মকান্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। নাগরিক নেতা ও মানবাধিকার কর্মী এ্যাড: জি এম কামরম্নজ্জামান বলেন, নারকোটিক্স দপ্তর সজাগ ও আনত্মরিক হলে নেশার ব্যবসা অনেকাংশে বন্ধ হতো। তবে এর জন্য চাই রাজনৈতিক অঙ্গিকার ও সমাজ সচেতনতা। তিনি নেশা রোধে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
সূত্রমতে, খুলনা মহানগরী সহ সাতড়্গীরা ও বাগেরহাট জেলা শহরের স্বল্প মূল্যের আবাসিক হোটেলগুলোতে ইয়াবার ব্যবহার বেশি। যুব সমাজও বেশ আসাক্ত হয়ে পড়েছে এর প্রতি। দীর্ঘদিন যাবৎ ধরে এখানকার মাদকসেবীরা নেশা হিসেবে হেরোইন, গাঁজা, ফেন্সিডিল, মদ, তাড়ি, ডিটি জেসিক ইঞ্জেকশন ও ডিএস স্পিরট সেবন করে আসছে। ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী মাদকসেবীরা আইপিল, সিডাক্সিন, ইনোকটিন, ব্যথ্যানাশক জামবাক, ইঁদুর মারা ঔষুধ, গরম্নর চিকিৎসায় ব্যবহৃত লোপেজেসিক মাদ্রাজি ইঞ্জেকশন ও টিকটিকের লেজ পুড়িয়ে নেশা করে। কিশোররা জুতা তৈরীর সলিউশন দিয়ে তৈরী ডান্ডি নেশার বস’ হিসেবে বেছে নিয়েছে। এখন হাই স্কুল থেকে শুরম্ন করে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিড়্গার্থীরা নেশায় টইটুম্বুর। অনেক অভিভাবকরাই তাদের মেধাবী ছেলেমেয়েদের নেশাগ্রসেত্মর কথা জানেনা। নেশার তালিকায় পুলিশ সদস্য, ডাক্তার, আইনজীবী, সংবাদকর্মী সহ বিভিন্ন শ্রেনী ও পেশাজীবী মানুষের নাম রয়েছে। মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলো থেকে এ ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। তবে স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েদের কাছে ইয়াবা এখন হটকেক। অনেকে কৌতুহল নিয়ে এটি সেবন করছে।
সূত্রমতে, নারকোটিক্স দপ্তর থেকে স্বীকার করা হয়েছে শুধু খুলনা মহানগরীর খালিশপুর, দৌলুতপুর, ফুলবাড়ী, নিরালা, গল্লামারী, বানিয়াখামার, টুটপাড়া ও লবণচোরা এলাকা নয় সীমানত্ম জেলার সাতড়্গীরার শহরসহ সীমানত্মবর্তী উপজেলাগুলো এবং মংলাবন্দর সহ বাগেরহাট জেলার উপজেলাগুলোতে এখন ইয়াবার ছড়াছড়ি। নিয়মিত পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা ইয়াবা এবং অনাগ্রা বিক্রি করছে। সব খবরই রাখে স’ানীয় আইন শৃক্ষলা রক্ষাকারীর কতিপয় সদস্যরা। তারা নিয়মিত মাশোহারা নিচ্ছেন। প্রতিমাসে গড়ে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে ১০-১৫ হাজার পিচ ইয়াবা প্রবেশ করে। প্রতি পিচের মূল্য সর্বনিম্ন ৩শ’ টাকা, সর্বোচ্চ সাড়ে তিনশ টাকা। ১৮-৪০ বছর বয়সী মাদকসেবীরা এর দিকে ঝুঁকে পড়েছে।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post