খুলনাঞ্চলের গলদা চাষীরা বিপাকে এনজিওদের চড়া সুদের প্রচন্ড চাপ ব্যাংক ঋণের কোন সুযোগ নেই

বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো: হোয়াইটগোল্ড নামে খ্যাত বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের লড়্গাধিক গলদা চাষীরা এখন চরম বিপাকে। চাষের প্রারম্ভে রেনু পোনা নিয়ে চলে তেলেছমাতি কান্ড। দাদন ব্যবসায়ীদের কষাঘাত চলে পুরো চাষাবাদের সময়। ব্যাংক ঋণের কোন সুযোগ নেই তাদের। তদুপরি রয়েছে এনজিওদের চড়া সুদের প্রচন্ড চাপ। আর এখন ভরা মৌসুমে গলদার দাম কেজিতে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা কমে যাওয়ায় তাদের মাথায় হাত। এ যেন মরার উপর খড়ার ঘা। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী এ খাতের মাঠ পর্যায়ের সৈনিকদের দুর্দশা লাঘবে সরকারী কোন উদ্যোগ বা কর্ম পরিকল্পনা না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়ছে চিংড়ি চাষীদের হাজার হাজার পরিবার। বঙ্গোপসাগরের কোলে লালিত পালিত সুন্দরবনের কোল ঘেষে গড়ে ওঠা খুলনা সাতড়্গীরা এবং বাগেরহাটের জনপদে চিংড়ি চাষ এক সফলতার স্বর্ণ অধ্যয়। স্বাধীনতার পরে এ অঞ্চলে পাটকল সহ বিভিন্ন ভারী শিল্প গড়ে উঠলেও প্রত্যনত্ম অঞ্চলে দারীদ্র বিমোচনে দীর্ঘ মেয়াদী স’ায়ী কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। সংশিস্নষ্ট কর্তৃপড়্গের উদাসিনতায় শিল্প সম্রাজ্যে যখন ধ্বস নামতে শুরম্ন করে ঠিক তখন মাঠ চাষিরা ঝুঁকে পড়েন সমন্বিত মৎস্য চাষ প্রকল্পের দিকে। বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের প্রায় ২০-২২টি উপজেলার গ্রাম গ্রামানত্মরে চিংড়ি চাষিরা তাদের মৎস্য ঘেরে সোনা ফলাতে শুরম্ন করে। প্রায় প্রতি বছর যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার চিংড়ি রফতানি হয় তার সিংহভাগ উৎপাদন হয় খুলনা বাগেরহাট ও সাতড়্গিরা জেলায়। এ চিংড়ি চাষ এখন রীতিমত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এক নতুন অর্থনৈতিক বিপস্নবের নাম।
সূত্রমতে, মাঠ পর্যায়ে ২০-২৫ শতাংশ জায়গা থেকে শুরম্ন করে ২০-৫০ একর জমি নিয়ে কৃষকরা পৃথক পৃথক মৎস্য ঘের করে আসছে। প্রানিত্মক গলদা চাষিদের জমির পরিমাণ কারো কারো ১ বিঘা থেকে ৫ বিঘা পর্যনত্ম। প্রানিত্মক চাষিরা যখন গলদা রেনু মৎস্য খামারে অবমুক্ত করে তখন থেকে শুরম্ন হয় তেলেছমাতি কারবার। নদীর রেনুর কথা বলে হরহামেশা বিক্রি হচ্ছে হেচারীর রেনু। তাছাড়া ভারত ও থাইলন্ডের নিম্ন মানের কালোবাজারীর পোনা ঢুকছে এঅঞ্চলে প্রতিবছর। ফলে পোনা অবমুক্ত করার ড়্গেত্রে অনেক প্রানিত্মক চাষিরাই প্রতারণার শিকার হয়ে প্রথম হোচটটি খায়। এরপর হাজার হাজার চিংড়ি চাষিরা ব্যাংক লোন না পেয়ে দারসত্ম হয় মহাজন নামক দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে। তারা নির্ধারিত কমমূল্যে (দাদন ব্যবসায়ীদের বেধে দেয়া) চিংড়ি বিক্রির অঙ্গিকার নিয়ে টাকা লগ্নি করে থাকে। এছাড়া মাইক্রোক্রেডিটের নামে ভুঁইফোড় সব সমিতি এনজিও এসব প্রানিত্মক চাষিদের কিসিত্ম ভিত্তিক ঋণ দিয়ে থাকে। মোট হিসাবে প্রায় ৩০-৩৫ শতাংশ চড়া সুদে এসব সংস’ার কাছ থেকে চাষিদের বাধ্য হয়ে ঋণ নিতে হয়। ফলে মাছ ছাড়া থেকে শুরম্ন করে বিপনন পর্যনত্ম সাপ্তাহিক কিসিত্মতে প্রানিত্মক চাষিদের ঋণের টাকা শোধ দেয়ার রিসাইকেলিং কর্মকান্ড চলতে থাকে। এতেই প্রানিত্মক চাষিদের গলদঘর্ম অবস’া। এরপর গলদা চিংড়ি বিপননের জন্য যখন প্রস’ত, তখন মূল্য হ্রাস চাষিদের মাথায় আকাশ ভাঙ্গার নামানত্মর মাত্র। বাজারে গলদা চিংড়ির দাম কেজিতে তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে এ অঞ্চলের লড়্গাধিক চাষি। লোকসানের মুখে এই মুহুর্তে তাদের নাওয়া খাওয়া নেই। গত বছর দশ গ্রেডের চিংড়ির মূল্য ছিল কেজিপ্রতি ৯৫০ টাকা। আর বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা। পঞ্চম গ্রেডের মাছ গত ৩-৪ মাস আগে ছিল ১১শ টাকা। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। ফলে প্রানিত্মক চাষিদের জন্য এটি একটি দুর্যোগ। খুলনা বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে খুলনা বাগেরহাট ও সাতড়্গিরা জেলায় প্রায় লড়্গাধিক চিংড়ি চাষি অর্ধ লড়্গাধিক হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ করছে। সাতড়্গীরার আশাশুনির চিংড়ি চাষী অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিড়্গক আব্দুল মজিদ বলেন, ৩ বিঘার ওপর আমার একটি চিংড়ি ঘের আছে। পোনা ছাড়া থেকে শুরম্ন করে মাছের খাবার দিয়ে এ পর্যনত্ম আমার খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। হিসাব অনুযায়ী এবার আমার ৫ লড়্গাধিক টাকার মাছ বিক্রি হওয়ার কথা ছিল। মাছেরও অবস’া ভাল। কিন’ দাম কম। তাই এ পর্যনত্ম ৬০ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছি। যাকে বলে পানির দামে। খুলনার থুকড় গ্রামের ঘের ব্যবসায়ী শাহ ইফতেখার আলম বাবু বলেন, ৮ বিঘা জমিতে আমার চিংড়ি প্রকল্প। এ মাসে যে বেচা কেনা হয়েছে তা অর্ধেক বলা যায়। এ অবস’া চলতে থাকলে লাভের বদলে লোকসান গুনতে হবে নিশ্চিত।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের ৩ জেলায় প্রায় লড়্গাধিক চিংড়ি চাষী এবার চিংড়ি চাষ করেছে। কিন’ সবাই এখন ঝুঁকিতে। বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষী সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, বাগেরহাট এখন কুয়েত। অর্থাৎ চিংড়ির টাকায় এ অঞ্চলের ৭৫-৮০ শতাংশ মানুষ স্বাবলম্বী। অধিকাংশ লোকেরেই চিংড়ি ঘের রয়েছে। অনেকেই ব্যাংক এনজিও দাদন ব্যবসায়ী সমিতি সহ আত্মীয় স্বজনের কাছে ঋনগ্রসত্ম। চিংড়ির মূল্য কমে যাওয়ায় তারা এখন চরম হতাশায়।
বি এম রাকিব হাসান,
খুলনা ব্যুরো
২৯-০৯-১৭

Post a Comment

Previous Post Next Post