ইঁলিশের দাম এখনও আকাশ ছোঁয়া বঙ্গোপসাগর জলসীমার বিশাল ইলিশ ভান্ডারে বিদেশী বর্গীদের হানা

ইঁলিশের

বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো: :ইলিশ মৌসুমে এখন সর্বত্র ইলিশ। তবুও দাম চড়া। যা গত বছরের তুলনায় কেজিতে ১-৩শ’ টাকা অতিরিক্ত। কিন’ ইলিশের ভান্ডারে হানা দিচ্ছে বিদেশী বর্গীরা। বাংলাদেশের জলসীমার গভীর বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় জেলেদের অবাধ অনুপ্রবেশ ঘটছে। এদেশের জলসীমায় তাদের অবাধ অনুপ্রবেশের কারণে বাংলাদেশী জেলেরা তাদের চাহিদামত পর্যাপ্ত শিকার করতে পারছে না। ভিন দেশি জেলেরা অত্যাধুনিক জাল ও ট্রলার নিয়ে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে এদেশের জলসীমার ইলিশ মাছ।
এদিকে আসন্ন ভরা কটালে আরও বেশি ইলিশ আহরণের সম্ভাবনা রয়েছে। জেলেরা এখন আর কেউ বাড়িতে নেই। সবাই নদীতে জাল পেতে ইলিশের অপেক্ষায়। বাজারেও মৌ মৌ ইলিশের গন্ধে। তবে ভরা ইলিশ মৌসুমে বিদেশী চোরা জেলেদের কারনে আমাদের দেশে ইলিশের দাম এখনও আকাশ ছোয়া । ভারতীয় জেলেদের শত শত ফিসিং বহর এখন বাংলাদেশ নৌ সীমানায়। বর্গীদের মত বঙ্গোপসাগরের বিশাল মৎস্য ভান্ডারে হানা দিচ্ছে দিন রাত। ফলে দেশীয় নিরীহ জেলেরা পর্যাপ্ত মাছ শিকার করতে পারছেনা। এদিকে সুন্দরবন দুবলা ফিসার ম্যান সমিতির চেয়ারম্যান ও জেলেদের রক্ষার কিংবদন-ী মেজর অব: জিয়া উদ্দিন সমপ্রতি মারা যাওয়ায় এ অঞ্চলের জেলেদের সাহস দুমড়ে মুচড়ে গেছে। এ সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভিন দেশী চোরা জেলে ও তাদের এজেন্টরা। সাগরের সুন্দরবন এলাকায় মাছ শিকাররত জেলের তাদের মহাজনদের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সুন্দরবন উপকুলীয় কয়েকটি জেলে পল্লী সূত্রে জানা গেছে, সাধারনত প্রতি ইংরেজী বছরের জুন-জুলাই মাস থেকে মার্চ মাস পর্যন- বাংলাদেশী জেলেরা বঙ্গোপসাগরে গভীরে ফেয়ারওয়ে বয়া, ট্রলার ও নৌকায় করে বিপুল পরিমান সামুদ্রিক মাছ ধরে থাকে। এ সময় সাগরের পানি শান- থাকায় এটা জেলেদের কাছে মাছ ধরার উপযুক্ত মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত। তবে ইলিশ মৌসুম থাকায় জুনের মাঝামাঝি থেকে জুলাই আগষ্ট ও সেপ্টম্বরে জেলেরা ঝুকি নিয়েও মাছ ধরে থাকে । এই মাছ ধরার মৌসুমে বিদেশী বিভিন্ন ট্রলার বিশেষ করে ভারতীয় ট্রলার বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকার করতে আসে। ভারতীয় ছাড়াও পার্শ্ববতী থাইল্যান্ড, মিয়ানমারের বিদেশী জেলেরা অবৈধভাবে বঙ্গোপসাগরে অনুপ্রবেশ করছে, এদেশের জলসীমায় সাগরে রক্ষিত বিশাল মৎস্য সম্পদের লোভে। মাছধরার আধুনিক সরাঞ্জামও বিশাল ট্রলারে করে বিদেশী জেলেরা মাছ ধরার কারণে এদেশীয় জেলেরা তাদের তুলনায় মাছ পাচ্ছে অনেক কম। অধিকাংশ সময় এসব বিদেশী বিশেষ করে ভারতীয় জেলেরা প্রকাশ্যে সাগর এলাকায় অনুপ্রবেশ করে এদেশের মাছ ও মাছ ধরার সরঞ্জাম লুটপাট করছে। বাংলাদেশী জেলেরা বিদেশী জেলেদের মাছ শিকারের প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। কোন কোন ক্ষেত্রে ভারতীয় জেলেরা এদেশের জেলেদের মাছ মারার ট্রলার ও চাল ডাল লুটপাট করতে পর্যন- দ্বিধা বোধ করে না। বাংলাদেশ নৌ বাহীনির হাতে মাঝে মধ্যে কিছু বিদেশী ট্রলার ধরা পড়লেও তার সংখ্যা কম। বিদেশী জেলেরা তাদের ট্রলারে বসে অত্যাধুনিক দুরবীনের মাধ্যমে দুর থেকে বাংলাদেশের নৌ বাহিনীকে আসতে দেখলেই দ্রুত ইঞ্জিন চালিয়ে পালিয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, ভারতীয় জেলেদের এদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করতে সেদেশের নৌ বাহিনীর সহযোগীতা করে থাকে। অনেক সময় ভারতীয় নৌ বাহিনী বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে এদেশের জেলেদের ধরে নিয়ে যায় বলেও জেলেরা অভিযোগ করেছেন। বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগর এলাকায় মৎস্য সম্পদের রয়েছে বিশাল ভান্ডার । বিদেশী বিশেষ করে ভারতীয় জেলেরা এ মৎস্য ভান্ডারের লোভে এলাকায় অনুপ্রবেশ করে সহজেই বিপুল পরিমান মাছ শিকার করতে পারে। আর এ কারণে শীত মৌসুমেও ভারতীয় জেলেরা অবাধে সাগরের এদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে শিকারের নামে মাছ লুটপাট করে নিয়ে যায়। বিদেশে মাছ লুটপাটের কারনে বাংলাদেশের মৎস্য ভান্ডারে ঘাটতি দেখা দেয়ার আশংকা রয়েছে।
দুবলারচরের সংলগ্ন আলোর কোল মাঝেরকিল্লা দুবলা, মানিকখালী , মেহের আলী চর সহ কয়েকটি জেলেপল্লীর জেলেরা জানান, এবার মৌসুমের শুরুতেই সাগরে গত বছরর মত ইলিশের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে অবস’া খারাপও নয়। কিন’ ভারতীয় জেলেদের অপতৎপরতার কারণে মাছ শিকার ব্যাহত হচ্ছে। পুলিশ সুত্রে জানা যায়, বিদেশী জেলেরা ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধে সাধারন অনুপ্রবেশ করে মাছ শিকারের অভিযোগে ১৯৮৩ সালের সামুদ্রিক ও মৎস্য অদ্যাদেশের ২২ ধারায় থানায় মামলা রুজু করে কারগারে পাঠানো হয়। বিচারের সময় বিদেশী জেলেরা সাধারনত বলে থাকে, দিক ভুল করে এদেশে চলে আশায় ক্ষমা প্রার্থী। ধরা পড়ার পর সাজার মেয়াদ কম হওয়ার কারণে অনেক বিদেশী এদেশে মাছ শিকার উৎসাহিত হয় বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়।
এছাড়া গত কয়েক বছর জাটকা নিধনে কড়াকড়ি থাকায় এ অঞ্চলে বড় ইলিশের যথেষ্ট দেখা মিলে। তাছাড়া গেল বছর ইলিশের দামও ছিল নাগালের মধ্যে। সব শ্রেনী পেশার মানুষ ইলিশের স্বাদ নিতে পেরেছিল। কিন’ এবার উপকুলীয় জেলেপল্লী দুবলারচরে মেহের আলীয় টেকের জেলেদের মহাজন মো: জাকির হোসেন ও বাচ্চু আলী বেগসহ কয়েকজন ট্রলার মালিকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় ডাকাতের উৎপাত কম। তবে কয়েকটি দস্যু বাহিনী এখনও সুন্দরবন ও সাগরে রয়েছে। এছাড়া বিদেশী জেলেরা অবস’া বুঝে কখনও কখনও ডাকাতির রূপ ধারন করে। তারা নিরীহ বাংলাদেশী জেলেদের মারপিট করে, ঘাট বেদখল করে ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।

বি এম রাকিব হাসান
খুলনা ব্যুরো
০৬-০৮-১৭

Post a Comment

Previous Post Next Post