মেহেরপুরে বানিজ্যিক ভাবে নেপিয়ার ঘাসের চাষ হচ্ছে জেলার চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে বাইরের জেলাতেও

 নেপিয়ার ঘাসের pic-Nepher_Grass-2[1]
KBDNEWS ঃ মেহেরপুরে বানিজ্যিক ভিত্তিতে ঘাসের চাষ হচ্ছে। গো-খাদ্যের সংকট ও লাভ জনক হওয়ায় চাষিরা ঘাস চাষের দিকে ঝুকে পড়েছেন। ঘাস চাষে চাষিরা যেমন লাভবান হচ্ছেন তেমনি এক শ্রেণীর মানুষ অল্প পুঁজি নিয়ে ঘাসের ব্যবসা করে ভালভাবে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ঘাস চাষের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে জেলায় বিভিন্ন মাঠে শ’শ’ বিঘা জমিতে ঘাসের চাষ হচ্ছে। বিভিন্ন প্রকারের ঘাস থাকলেও নেপিয়ার ঘাস চাষে অধিক লাভ করা যায় বলে চাষিরা মনে করেন। তাই তারা নেপিয়ার ঘাসের চাষ করে থাকেন। বিঘা প্রতি ১৫ হাজার টাকা ব্যয় করে বছরে ৩৬ হাজার টাকার ঘাস বিক্রি করা যায়। ওই ঘাস নিজে খুচরা বিক্রি করলে প্রতি বিঘা ঘাস ৪৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। সার, বিষ, বীজ আর জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে চাষিরা ধান চাষ করে লাভবান হতে পারছেন না। তাই তারা সবজি চাষের প্রতি বেশী ঝুঁকে পড়েছেন। ধান চাষ কমে যাওয়ায় বিচালির দাম বৃদ্ধি তদুপরি মাঠের পর মাঠ সবজি চাষের জন্য মানুষ গোবাদি পশু বাড়ি থেকে বের করতে পারছে না। বাধ্য হয়ে খামার মালিকরা ও সৌখিন গোবাদি পশু পালনকারিরা খাস-পাতা কিনে তাদের গোবাদি পশু পালছেন। বর্তমানে খৈল, ভূষি আর বিচালির দাম আকাশ ছোঁয়া। বিচালির চেয়ে সবুজ ঘাসে পুষ্টি আর খাদ্যগুন বেশি। ঘাস খেলে গাভী তুলনা মূলকভাবে দুধ অনেক বেশি দেয়। তাই খাদ্য ঘাতটির প্রতি অভিযোগ না করলেও গো খাদ্যের জন্য ঘাসের প্রতি অধিক গুরম্নত্ব দিচ্ছেন সৌখিন গোবাদি পশু পালনকারি ও খামার মালিকরা। ঘাসের চাহিদাকেও কাজে লাগাচ্ছেন জেলার ঘাস চাষিরা। এদিকে বাগান করা লাভ জনক হওয়ায় জেলার শ’শ’ বাগানকারি ৮ থেকে ১০ বছর পর্যনত ওই সব বাগানের ভেতরে ঘাস লাগিয়ে সাথী ফসলের কাজটি সেরে নিচ্ছেন। এতে বাগানের গাছ ফল দেওয়ার আগেই বাগান মালিকরা লাভবান হচ্ছেন। মেহেরপুরে উৎপাদিত নেপিয়ার ঘাস জেলায় বিক্রির পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলা গুলোতেও রপ্তানি হচ্ছে। এ ঘাস জেলা শহরের হোটেল বাজার, নতুনপাড়া স্কুল মোড়, কোর্ট মোড়, বড় বাজার, কাথুলী বাসস্ট্যান্ড, ওয়াপদা মোড়, কলেজ মোড় ও পার্কের সামনে, সদর উপজেলার বামনপাড়া, আমঝুপি ও বারাদী বাজার, মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী, দারিয়াপুর, কেদারগজ্ঞ, মহাজনপুর ও কোমরপুর বাজারে এবং গাংনী উপজেলা শহরের হাসপাতাল ও বাসস্ট্যান্ড এলাকা, উপজেলার জোড়পুকুরিয়া, বামুন্দি ও গাড়াডোব বাজারসহ জেলার বিভিন্ন হাটে বাজারে ঘাস বিক্রি হচ্ছে।

নেপিয়ার ঘাসের

মেহেরপুর জেলা শহরের লর্ড মার্কেটের বাসিন্দা মারম্নফুজ্জামান গোরা এ বছর ২৫ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাষের চাষ করেছেন। ঈদগাপাড়ার ঘাস চাষি আশরাফুল জানান, এবছর তিনি নিজেই ৭ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছেন। আর ব্যবসার জন্য আরও ২৫ বিঘা জমির ঘাস অন্য চাষির কাছ থেকে কিনেছেন। তিনি আরও বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে মাত্র ৩ হাজার টাকা খরচ করে ঘাস রোপন করে প্রথম ৩ মাস পর থেকে ঘাস কাটা যায়। এর পর প্রতি ২ মাস অনতর বছরে ৬ বার ওই জমি থেকে ঘাস সংগ্রহ করা যায়। তিনি আরও বলেন, প্রতিবার মাত্র ২ হাজার টাকার সার-পানি দিলে ৬ হাজার টাকার ঘাস বিক্রির জন্য বাজারে নেয়া যায়। মেহেরপুর শহরের উপকণ্ঠ দিঘীরপাড়ার ঘাস ব্যবসায়ি রফিকুল ইসলাম বলেন, ৪/৫ বছর ধরে ঘাসের ব্যবসা করছি। দিনে দিনে মেহেরপুরে ঘাসের চাষ বেশি হচ্ছে। ঘাসের ব্যবসায়িও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেহেরপুর ওয়াপদাপাড়া, ময়ামারি ও সিঙের মাঠসহ জেলার প্রায় প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জের মাঠে নেপিয়ার ঘাস চাষ হচ্ছে। তিনি আরও জানান, শহরের পাশের ক্ষেত থেকে ৪ টাকা আটি দরে ঘাস কিনে এনে বিক্রির জন্য শহরে বসি। ৫টাকা আটি দরে ওই ঘাস বিক্রি করি। প্রতিদিন কম পক্ষে ২শ’ আটি ঘাস বিক্রি করি। ওয়াপদাপাড়ার ঘাস ব্যবসায়ি মুক্তি বলেন, অন্যান্য ব্যবসায় পুজি বেশি লাগে। শারিরিক পরিশ্রমও করতে হয় অনেক বেশি। সেই তুলনায় ব্যবসায় কম পুঁজি ও কম পরিশ্রমে বেশি লাভ করা যায়। তাই ঘাসের ব্যবসা শুরম্ন করেছি। ৪শ’ টাকায় একশ’ ঘাসের আটি কিনে ৫শ’ টাকায় বিক্রি করি। প্রতিদিন তিনি ২শ’ থেকে আড়াইশ’ আটি নেপিয়ার ঘাস বিক্রি করে থাকেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post