মেহেরপুরের চাষীরা লাল শাকের বীজ উৎপাদনে ঝুঁকে পড়েছেন

Meherpur_Pic-1.[1]লাল শাকের বীজMeherpur_Pic-3.[2]Meherpur_Pic-4.[2]

কামরুজ্জামান খান: মেহেরপুর জেলার উত্তর অঞ্চলে ব্যাপকহারে লাল শাকের বীজ উৎপাদন হচ্ছে। বিভিন্ন বে-সরকারি বীজ কোম্পানী এ জেলার চাষীদের অগ্রীম সার ও বিষসহ আবাদ খরচ দিয়ে ড়্গেতে লাল শাকের বীজ উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করছেন। তাদের উৎপাদিত লাল শাকের বীজ কোম্পানী উচ্চমূল্যে কিনে নিচ্ছেন। মাত্র ৩ মাসের এ ফসল উৎপাদনে অগ্রিম সুবিধা ও অধিক লাভ পাওয়ায় এলাকার চাষীরা ধান-গম ও মসলা জাতীয় ফসলের আবাদ কমিয়ে লাল শাকের বীজ উৎপাদনে ঝুঁকে পড়েছেন।

অনুকুল আবহাওয়া ও মাটির উর্বরতার গুনে মেহেরপুর জেলা সবজি উৎপাদন খ্যাত জেলা হিসেবে বিশেষ পরিচিত লাভ করেছে। যে কারণে দেশ স্বাধীনের পূর্বেই সরকারিভাবে এ জেলার সদর উপজেলার আমঝুপি ও বারাদীতে দু’টি বৃহৎ সবজি বীজ উৎপাদন খামার গড়ে তোলা হয়। যা থেকে উৎপাদিত বীজ বাংলাদেশের সবজি বীজের চাহিদার একটি বিরাট অংশ পূরণ করে থাকে। এ জেলার মাটিতে ভাল সবজি বীজ উৎপাদন হয় জেনে বিভিন্ন বে-সরকারি বীজ সংগ্রহকারী কোম্পানী এ জেলার উত্তর অঞ্চলের কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মাঠে লাল শাকের বীজ উৎপাদনের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। তারা চাষীদের সার ও বিষসহ আবাদ খরচ অগ্রীম দিচ্ছেন। তাদের উৎপাদিত লাল শাকের বীজ বাড়ি থেকে বেশি মূল্যে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন কোম্পানির লোকেরা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার উজুলপুর, শোলমারী, মনোহরপুর, ফতেপুর, সুবিদপুর, ঝাউবাড়িয়া, তেরঘোরিয়া, কুতুবপুর, উত্তর শালিকা ও রামদাসপুর এবং গাংনী উপজেলার সাহারবাটি ও কাথুলী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মাঠে চাষীরা বিগত ৫/৭ বছর ধরে লাল শাক ব্যাপক হারে চাষ করেছেন। সরে জমিনে ওই সব গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায় মাঠের পর মাঠ লাল শাকের ড়্গেত। আগাম লাগানো লাল শাকের বীজ ইতিমধ্যে সংগ্রহ করা শুরম্ন করেছেন কৃষক। মেহেরপুর থেকে কাথুলী হয়ে গাংনী পর্যনত্ম প্রায় ২৫ কিলো মিটার রাসত্মার উপর বিভিন্ন স’ানে চাষীরা শুকাচ্ছেন লাল শাকের বীজ।
মেহেরপুর সদর উপজেলার উজুলপুর গ্রামের কৃষক নয়ন ২ বিঘা ও একই গ্রামের কবিপাড়ার আমানুলস্নাহ ৩ বিঘা জমিতে লাল শাকের চাষ করেছেন। কৃষক নয়ন ও আমনুলস্নাহ’র সাথে কথা হয়। তারা অভিন্ন ভাষায় জানান, বিগত ৫/৭ বছর ধরে মেহেরপুরের এ অঞ্চলে লাল শাকের বীজ উৎপাদন হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে লাল শাক চাষ করে বীজ ওঠানো পর্যনত্ম চাষ, সার, বিষ ও লেবার বাবদ সব মিলিয়ে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হয়। বীজ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন বে-সরকারি বীজ কোম্পানীর লোকেরা চাষীদের আবাদ খরচ বাবদ অগ্রীম খরচের টাকা দিয়ে যান। এবছর কোম্পানীর লোকেরা বাড়ি থেকে প্রায় ৮ হাজার টাকা মন দরে বীজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবিঘা জমিতে উৎপাদিত লাল শাক হতে ৫ মন থেকে ৬ মন বীজ পাওয়া যায়। খরচ বাদ দিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদিত লাল শাকের বীজ বিক্রি করে কৃষক ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা লাভ পাচ্ছেন। তারা আরো বলেন, ধান-গম ও মসলা জাতীয় ফসলের চাষ করে কৃষককে লাভ-ড়্গতির আশঙ্কায় থাকতে হয়। সেই হিসেবে লাল শাকের বীজ উৎপাদনে চাষীকে ড়্গতির আশঙ্কা করতে হয়না। তারা আরো বলেন, এ এলকায় চাষীরা কয়েক বছর ধরে লাল শাকের বীজ উৎপাদন করে তাদের ভাগ্য ফিরিয়েছেন। বীজ উৎপাদনের জন্য ড়্গেতে লাল শাক চাষ করে তারা নিজেরাও খুশি।
মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামরম্নজ্জামান বলেন, এ বছর মেহেরপুর সদর উপজেলায় প্রায় ২হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লড়্গ্যমাত্রা ধারা হয়েছে। এর মধ্যে লাল শাক শাকের লক্ষ্যমাত্রা আলাদা করে হিসেব করা নেই। তবে বীজ উৎপাদনের জন্য মেহেরপুর সদর উপজেলার উত্তর অঞ্চলে অধিক হারে লাল শাকের চাষ হচ্ছে। এ বছর লাল শাকের আবাদকৃত জমির পরিমান প্রায় ৩শ’ হেক্টর হবে বলে তিনি জানান।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post