মেহেরপুরে কলাই চাষীদের মুখে হাসি ॥ কম খরচে বেশি লাভ

kalia-bori kolai-kat

KBDNEWS  : মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকার মাঠজুড়ে চাষ হয়েছে কলাই। সবচেয়ে কম খরচের এ কলাই চাষে লাভ অনেক বেশি। ফলে মেহেরপুরের চাষিরা এ ফসলটির চাষ বেছে নিয়েছেন।
সঠিক হিসাব না থাকলেও কৃষি বিভাগের ধারণা, এ বছর জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে কলাই চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কলাই চাষে জেলার কৃষক এ বছর যথেষ্ট লাভবান হয়েছেন। কুমড়ার বড়ির অন্যতম উপাদান কলাই। অন্যান্য বছর কুমড়ার বড়ি তৈরি করার জন্য চাষিরা অল্প পরিমাণ জমিতে কলাই চাষ করতেন। গৃহিনীরা কুমড়ার বড়ি দেওয়ার পরে চাষি বাকি কলাই বিক্রি করে দিতেন। পাট কাটার পরে চাষ না দিয়ে জমিতে কলাইয়ের বীজ ছিটিয়ে দিলেই বিনা খরচায় আড়াই মাস পরে খেত থেকে কলাই কাটা যায়। জেলায় পর্যাপ্ত কলাই চাষ হওয়ায় কুমড়ার বড়ি বানানোর কারিগররাও খুশি। কলাইয়ে ভূষিও ফেলনার নয়। এটা গবাদিপশুর অত্যনত্ম প্রিয় খাদ্য।
মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের ফিরোজ আহমেদ মাস্টার এ বছর ২ বিঘা জমিতে কলাই চাষ করেছেন। তিনি জানালেন, ধান-পাটের মত অন্যান্য ফসলের চাষ করে দাম না পেয়ে চাষি যখন ক্ষতিগ্রসত্ম হচ্ছেন তখন প্রায় বিনা খরচের কলাই চাষে চাষি লাভবান হচ্ছেন। তিনি আরো জানান, চাষি পাটসহ অন্যান্য ফসল কাটার পরে ভাদ্র মাসে জমিতে কলাই বীজ বপন করেন। আড়ই মাস পরে অর্থাৎ কার্তিক মাসে খেত থেকে কলাই কাটা যায়। কলাই বীজ বপন থেকে কাটা ও মাড়াই পর্যনত্ম বীজ ক্রয়, শ্রমিক, পরিবহণ ও মাড়াই খরচ বাবদ একবিঘা জমিতে সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘা জমি থেকে কমপক্ষে ৬ মণ কলাই পাওয়া সম্ভব। মণপ্রতি ২ হাজার টাকা হলে যার বাজার মূল্য দাঁড়ায় ১২ হাজার টাকা। এ ছাড়া কলাই মাড়াই করার পরে প্রাপ্ত ভূষি গবাদিপশুর জন্য খাদ্যগুণ সমৃদ্ধ একটি প্রিয় খাদ্য।
মেহেরপুর সদর উপজেলার শোলমারী গ্রামের কৃষক ও স’ানীয় কলেজশিক্ষক মফিজুর রহমান জানান, কলাই কুমড়ার বড়ি তৈরির অন্যতম উপাদান। কুমড়ার বড়ির চাদিহা দেশজুড়ে। তারপরও প্রতি বছর প্রচুর কুমড়ার বড়ি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে বিশেষ করে ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে যাচ্ছে। এসব কারণে কলাইয়ের চাহিদা সবসময় থাকে। আর চাহিদার কারণে কলাইয়ে ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষক। কলাই কেটে চাষি ওই জমিতে বারি-৩ ও বারি-৭ জাতের মুসর ডাল অথবা গম সহজভাবে চাষ করতে পারবেন।
মুজিবনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোফাফখারম্নল ইসলাম জানান, সবচেয়ে কম খরচের ফসল কলাই। পাট কাটার পরে জমিতে কলাইয়ে বীজ বপন করলেই যথেষ্ট। বিনাচাষে কলাই চাষ সম্ভব। তারপরও চাষি চাষ দিয়ে কলাই চাষ করলে পরের ফসলের জন্য যথেষ্ট উপকার পাবেন। মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম কামরম্নজ্জামান জানান, মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে বিশেষ করে উঁচু জমিতে প্রচুর কলাইয়ের চাষ হয়েছে। আশা করা যায়, চাষি যথেষ্ট লাভবান হবেন। তিনি আরো জানান, যেখানে অন্য কোনো ফসলের চাষ করে চাষি ক্ষতিগ্রসত্ম হচ্ছেন, সেখানে কলাই চাষ করে চাষি লাভবান হলে কৃষি বিভাগ এ চাষে তাদের উদ্বুদ্ধ করবে। এ ছাড়া কলাই চাষে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post