খুলনার লিনিয়ার পার্ক আজও তালাবদ্ধ ফাইল চালাচালিতে কেটে গেছে দেড় বছর

খুলনা থেকে বি এম রাকিব হাসান : প্রধান ফটকের সামনেই দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা। তালা ঝোলানো গেটে জমেছে ধুলোর আস্তরণ। ভেতরে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে কাটা দিয়ে ঘেরা রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ ও গরুর গাড়ি ও রাখালের সুদৃশ্য ভাস্কর্য। আছে দোলনা, সিস্নপার, জাম্পি প্যাডসহ শিশুদের অসংখ্য খেলনা সামগ্রী। ধুলোয় সবই বিবর্ণ। মাদকসেবীদের ভয়ে অবজারভেশন টাওয়ার, খেলনা ও রেপ্লিকাগুলো কাটা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।

খুলনার লিনিয়ার পার্কের দৃশ্য এগুলো। নগরবাসীর চিত্ত-বিনোদনের জন্য ময়ূর নদীর তীরে প্রায় ২১ কোটি টাকা দিয়ে পার্কটি তৈরি করেছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)। ২০১৪ সালের জুনে পার্কের কাজ শেষ হয়। কিন্তু পার্কটি কিভাবে পরিচালনা হবে এনিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল কেসিসির ১৫তম সাধারণ সভায় বেসরকারি সংস্থার কাছে ইজারা দিয়ে পার্কটি চালুর সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ফাইল আর চিঠি চালাচালিতে কেটে গেছে আরও দেড় বছর। কিন্তু পার্কটি আর চালু হয়নি।

নির্মাণের প্রায় ২ বছরেও পার্কটি চালু না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খুলনার নাগরিক নেতারা। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ জামান বলেন, খুলনায় বিনোদনের কোনো জায়গা নেই। নদীর তীরে লিনিয়ার পার্কের দিকে তাকিয়ে আছে নগরবাসী। কিন্তু কেসিসির ধীরে চলো নীতির কারণে পার্কের সুফল পাচ্ছে না কেউ। যতো দ্রুত সম্ভব নামমাত্র প্রবেশ মূল্যে পার্কটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানান তিনি।

কেসিসির সূত্রে জানা গেছে, গল্লামারী এলাকায় ময়ূর নদীর তীরে লিনিয়ার পার্কের নির্মাণ প্রকল্প নেয়া হয় ২০০৯ সালে। প্রায় ১৪ একর জায়গা ঘিরে পার্কটি গড়ে তোলা হয়েছে। পার্কটির সবচেয়ে আর্কষণীয় দিক হচ্ছে নদীর তীর ঘেঁষে যাওয়া পার্কটি সোয়া দুই (১.৭৫) কিলোমিটার লম্বা। এর ভেতরে হাঁটার জন্য ওয়াকওয়ে রয়েছে। পার্কটি নির্মাণের জন্য মোট ব্যয় হয়েছে ২০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। পার্কের প্রবেশদ্বারের বাম পাশ্র্বে ৫টি দোকান ঘর, একটি এন্টিপ্লাজা ও অফিস ভবন, পার্কিং চত্বর ও একটি রেস্টুরেন্ট আছে। এছাড়া ভেতরে ৪ তলা একটি অবজারভেশন টাওয়ার, বাঘ ও হরিণের রেপ্লিকা, গরুর গাড়ি ও রাখালের ভাস্কর্য, ১০টি আমব্রেলা সেড, দু’টি টয়লেট কমপ্লেঙ্, একটি দৃষ্টিনন্দন সেতু, দুটি পিকনিক সেড, ৮ আইটেমের খেলনা রয়েছে। নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পার্কের ভেতরে আরও দু’টি ঝুলন্ত সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। সরেজমিন পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, পার্কটি চালু না হওয়ায় নিরাপত্তা প্রহরীও নেই।

সুযোগ পেলেই বহিরাগতরা সীমানা প্রাচীর টপকে পার্কে প্রবেশ করছে। এদের কেউ কেউ মাদক সেবনও করছে। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না হওয়ায় খেলনা ও ভাস্কর্যগুলো ধুলোয় বিবর্ণ হয়ে আছে। ব্যবহারের অভাবে পার্কের ভেতরে স্থাপনাগুলোও নষ্ট হতে বসেছে। এছাড়া পার্কের ভেতরে আরেকটি প্রকল্পের কাজ চলায় নির্মাণ সামগ্রী ছড়িয়ে রাখা হয়েছে যেখানে-সেখানে। ব্যবহার না করায় পার্কটিতে আগাছায় ভরে গেছে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না অনেকদিন ধরে। পার্কের প্রকল্প পরিচালক ও কেসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী খান জানান, গত ২১ জানুয়ারি পার্কটি আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পত্তি শাখার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া ইজারা দিয়ে পার্কটি চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইজারার শর্ত অনুযায়ী পার্কের ভেতরে প্রতিষ্ঠানটি আরও ১৫টি নতুন খেলনা সংযোজন করবে। কেসিসির ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনিসুর রহমান বিশ্বাস বলেন, দ্রুত পার্কটি চালুর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এই মাসের মধ্যেই ইজারাদার নির্বাচন করে আগামী মাসে পার্কটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর ইচ্ছা আছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post