বি.এম.রাকিব হাসান, খুলনা: সুন্দরবনের এক সময়ের মূর্তিমান আতঙ্ক বনদস্যু মাষ্টার বাহিনী, ইলিয়াস বাহিনী, মজনু বাহিনী, শান- বাহিনী ও আলম বাহিনীর বনদস্যুরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে র্যাবের কাছে আত্মসমর্পন করায় এবার অনেকটা স্বসি-তে শুরু হয়েছে শুটকি আহরণ মৌসুম। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের দুবলাসহ ১৪টি চরে শুরু হয়েছে শুটকি আহরণ মৌসুম। প্রতি বছর ১ অক্টোবর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন- প্রায় ৬ মাসব্যাপী থাকে এ মৌসুম। গত বছর পূর্ব বনবিভাগ শুটকি আহরণ মৌসুমে ৯ হাজার ৮শ’ ৩৮জন জেলের কাছ থেকে ১ কোটি ৭০ লক্ষ ৮শ’ ৮৫ টাকা রাজস্ব আদায় করলেও চলতি শুটকি মৌসুমে এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে দুই কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে বলে আশা করছে বনবিভাগ। গতকাল থেকে জেলে-বহরদারদের মাঝে পাস-পারমিট দেয়া শুরু হয়েছে বলে পূর্ব সুন্দরবন সূত্রে জানা গেছে। এদিকে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শুটকি মৌসুমে জেলে-বরদাররা বনদস্যু আতঙ্ক ছাপিয়ে আছে স্বসি-র মধ্যে। বনদস্যু বাহিনীগুলোর সদস্যরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে র্যাবের কাছে আত্মসমর্পন করায় এবারের শুটকি আহরণ মৌসুমে জেলে-বহরদাররা নির্বিঘ্নে তাদের কাজ করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছে জেলে-মহাজনরা। তারপরও প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জেলে-বহরদারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বনবিভাগ, র্যাব, কোস্টগার্ড ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্য সতর্ক অবস’ানে রয়েছে বলে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ দাবী করেছে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, সমুদ্রে মৎস্য আহরণ ও শুটকি মৌসুমকে ঘিরে এ বছর ১০/১৫ হাজার জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ী জড়ো হয়েছে সুন্দরবনের দুবলার চর, মেহের আলীর চর, আলোর কোল, অফিসকিল্লা, মাঝেরকিল্লা, শেলার চর, নারকেল বাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া, মানিকখালী, কবরখালী, চাপড়াখালীর চর, কোকিলমনি ও হলদাখালী চরে। সুন্দরবন অভ্যন-রে কমপক্ষে ১৫টি মৎস্য আহরণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্র নিয়ে এই দুবলা জেলে পল্লী। দুবলা জেলে পল্ল্লীর জেলেরা নিজেদের থাকা, মাছ ধরার সরঞ্জাম রাখা ও শুটকী তৈরির জন্য প্রতি অস্থায়ী ঘর ও মাচা তৈরি করে থাকে। জেলেরা সমুদ্র মোহনায় বেহুন্দীসহ বিভিন্ন প্রকার জাল দিয়ে মাছ শিকার করে তা বাছাই করে জাত ওয়ারী মাছগুলো শুটকী করে থাকে। এ পল্ল্লীতে মূলতঃ জেলেদের মৎস্য আহরণ ও শুটকি প্রক্রিয়াকরণের ওপর ভিত্তি করেই বন বিভাগের রাজস্ব আয় হয়ে থাকে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ সাইদুল ইসলাম বলেন, গত বছর শুটকি আহরণ মৌসুমে প্রায় পৌঁনে দুই কোটি টাকার মত রাজস্ব আদায় হলেও এ বছর দুই কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার কুইন্টাল শুটকি আহরণ করেছিল জেলেরা। এ বছর আশা করা হচ্ছে ৩৫ হাজার কুইন্টাল শুটকি আহরণ করা হবে। তারা পাস-পারমিট ছাড়া সুন্দরবনে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও জেলেদের কাছ থেকে যদি সুন্দরবন বিভাগের কেউ অবৈধভাবে টাকা আদায় করে থাকে, এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দুবলায় অবস্থানরত জেলেরা সুন্দরবনের কোন গাছ ঘর তৈরী বা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। এছাড়া রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে চলতি মৌসুমের শুরুতেই নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ।