সীমান্ত ব্যাংকের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

 

বাসস

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পরিচালনায় বিজিবি’র সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণের লক্ষ্যে ‘সীমান্ত ব্যাংক’ গতকাল যাত্রা শুরু করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে বিজিবি সদর দফতর পিলখানার ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে বিজিবি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ব্যাংকের কর্মসুচীর অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

সীমান্ত ব্যাংকের উদ্বোধন এ বাহিনীর সকল সদস্যের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ঈদের বিশেষ উপহার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি, এই ব্যাংক বিজিবি’র সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদস্যদের শৃঙ্খলা, আনুগত্য ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বিজিবি’র সুনামকে অক্ষুণ্ন রাখার পাশাপাশি সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষা ও উন্নয়নে আরও নিবেদিত হবারও আহবান জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামন খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সীমান্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ স্বাগত বক্তৃতা করেন।

মন্ত্রীবর্গ , সংসদ সদস্য, তিনবাহিনী প্রধান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ উচ্চপদস্থ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা শৃঙ্খলা, আনুগত্য ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান বিজিবি’র সুনামকে অক্ষুণ্ন রাখবেন। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষা ও উন্নয়নে আরও নিবেদিত হবেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশটি আমাদের সকলের। আসুন, সকলে মিলে কাজ করে বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ বিজিবি’র প্রতিটি সদস্যদের জন্যও বিশেষ আনন্দের দিন। মাত্র কয়েকদিন পর পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। সীমান্ত ব্যাংকের উদ্বোধন এ বাহিনীর সকল সদস্যের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ঈদের বিশেষ উপহার।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, এই ব্যাংক বিজিবি’র সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে।’

এর আগে প্রধানমন্ত্রী প্রথম গ্রাহক হিসেবে নতুন প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটিতে একটি একাউন্ট খোলেন।

অনুষ্ঠানে সীমান্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোখলেসুর রহমান ব্যাংকটির ওপর একটি অডিও ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত এই বেসরকারি খাতের ব্যাংকটির যাত্রা শুরুর মাধমে বিজিবি সদস্যদের দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন পূরণ হল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বনির্ভরতা অর্জনে প্রতিটি বাহিনীকে আমরা সহায়তা করতে চাই। আজ যে সীমান্ত ব্যাংক চালু হচ্ছে তা বিজিবি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট-এর একটি স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান। আমি আশা করি, ‘বিজিবি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ আরও নতুন নতুন উপার্জনশীল প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে।

২০১৪ সালে পিলখানায় অনুষ্ঠিত দরবার হলে আপনারা আমার কাছে একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি তৎক্ষণাৎ তাতে সম্মতি দেই। বিজিবি মহাপরিচালকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেই।

তিনি বলেন, গত বছর বিজিবি দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি সীমান্ত ব্যাংকের ‘লোগো’ উন্মোচন করেন। একইসাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সীমান্ত ব্যাংকের ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ বিজিবিকে হস্তান্তর করেন। বিজিবি’র ৪০০ কোটি টাকার প্রাথমিক মূলধন যোগান দেয়াসহ অন্যান্য কাজ শেষে আজ থেকে সীমান্ত ব্যাংকের আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাংকের আয় বিজিবি’র মুক্তিযোদ্ধা সদস্য, কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সদস্য ও তাদের পরিবারের কল্যাণে ব্যয় করা হবে। এ ব্যাংক সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, পেনশন স্কিম, গৃহনির্মাণ ঋণ, দুরারোগ্য রোগের জন্য দেশে-বিদেশে চিকিৎসা সহায়তা, কৃষি ঋণ, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মত বহুবিধ খাতে ঋণ সহায়তা প্রদান করবে। এছাড়া সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষের কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা প্রদান করবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিজিবি’র নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালিত ‘আলোকিত সীমান্ত’ ও ‘সমৃদ্ধির পথে সীমান্ত’-এর মতো বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নেও এই ব্যাংক সহায়তা দেবে, যা সীমান্ত অপরাধ রোধে ভূমিকা রাখবে। বিজিবি সদস্যের যোগ্য সন্তানদের এ ব্যাংকে নিযোগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে, যা বেকারত্ব হরাসে ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, সীমান্তে বিজিবি’র কঠোর অবস্থানের ফলে চোরাচালান, মাদক পাচার, নারী-শিশু পাচার ও সীমান্ত অপরাধ অনেকটা হরাস পেয়েছে। বিজিবি-বিএসএফ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারের ফলে সীমান্তে নিহতের ঘটনা কমে এসেছে। এছাড়া কোন কারণে বিএসএফ’এর হাতে বাংলাদেশি নাগরিক আটক হলে প্রয়োজনীয় যোগাযোগের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে। উল্লেখ্য, এ বছর ২১ জুলাই সীমান্ত ব্যাংক বাংলাদেশ বাংকের ‘সিডিউলড ব্যাংক’ হিসেবে নথিবদ্ধ হয় এবং এ বছর ১ আগস্ট এটি গেজেডভুক্ত হয়।

পল্লী রেশনিং ব্যবস্থা চালু করবে : সরকার

সরকার হতদরিদ্র এবং পঙ্গু ও প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য শীঘ্রই ‘পল্লী রেশনিং’ চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করবে। যেখানে মাত্র ১০ টাকায় চাল ক্রয়ের সুযোগ থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে বিজিবি সদর দফতর পিলখানার ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে বিজিবি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘সীমান্ত ব্যাংক’ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খুব শীঘ্রই পল্লী রেশনিং চালু করতে যাচ্ছি। সেখানে হত-দরিদ্র এবং পঙ্গু-প্রতিবন্ধীদের জন্য এই পল্লী রেশনিং’এর ব্যবস্থা করবো। এই রেশন কার্ড যাদের হাতে থাকবে মাত্র ১০ টাকায় তারা চাল কিনতে পারবেন। সে সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব মন্দার মধ্যেও আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ০৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা বিশ্বের অনেক দেশই পারেনি। প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশ্বের প্রথম ৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান রয়েছে। এই বিশাল আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন আসলে কোন ম্যাজিক নয়। বরং তাঁর জনগণের প্রতি কর্তব্য নিষ্ঠা, আন্তরিকতা এবং পরিকল্পনা মাফিক উন্নয়নের পদক্ষেপ বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামন খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সীমান্ত ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ স্বাগত বক্তৃতা করেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post