হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব

বি. এম. রাকিব হাসান, খুলনা: খুলনায় পাট শিল্পের ঐতিহ্য প্রায় অর্ধ শতাব্দির। রয়েছে ভাঙ্গা গড়ার দীর্ঘ উপখ্যান। পাট নির্ভর অর্থনীতির পতন হওয়ায় বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের শিল্প ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে নতুন করে কাঁচামালের প্রাপ্তিতার উপর ভিত্তি করে মাঝারী ও ক্ষুদ্র শিল্পের প্রসার এখন সময়ের দাবি। বিশ্লেষকরা বলছেন অমাবশ্যার ঘোর কেটে যাচ্ছে। খুলনাঞ্চলের প্রতি বর্তমান সরকারে সফট কর্ণার রয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে উদ্যোক্তাদের এখনই মাঠে নামতে হবে। বিপুল সম্ভাবনার জনপদ খুলনাঞ্চলে শিল্পের প্রসার ঘটে আবারো ফুলে ফলে সুশোভিত হবে। বিগত জোট সরকারের আমলে খুলনাঞ্চলের শিল্পখাত একেবারেই তছনছ হয়ে যায়। এ সেক্টরের মেরুদন্ড সোজা করতে নীতি নির্ধারকরা নীতিগত সিদ্ধান- নিয়ে সমস্যার উত্তরনে বস-াবমুখী রোডম্যাপে অগ্রসর হচ্ছে।

খুলনায় সোনালী আঁশ পাটের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠা পাটশিল্প এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রানেত। অসি-ত্ব বিলীন হতে চলেছিল শিল্প সমৃদ্ধ বন্দর নগরী খুলনার। এ নাজুক অবস্থা থেকে এখন ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা চলছে। খুলনায় রয়েছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। রয়েছে চিংড়ী উৎপাদনের বিশাল অঞ্চল। আছে বঙ্গোপসাগরের মৎস্য সম্পদ। এ অঞ্চলে গড়ে উঠতে পারে সম্ভাবনাময় লবণ চাষের ক্ষেত্র। এসকল সম্পদ ও কাঁচামালের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠতে পারে খুলনা ও খুলনাঞ্চলে নতুন নতুন মাঝারী ও ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান। আর এইসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানী করে আয় করা যেতে পারে হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা।
বাংলাদেশের হস- ও কুটির শিল্পের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বহির্বিশ্বে। সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ দিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পে এবং কুটির শিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরী করা যেতে পারে। এ অঞ্চলের বাঁশ ও গেওয়া কাঠ দিয়ে তৈরী হতে পারে নানান দ্রব্যাদী। যার কদর সারা পৃথিবীতে বিদ্যমান। বৃহত্তর খুলনার মাটির তৈরী টালি শিল্প ইটালীতে রপ্তানী হচ্ছে। এই শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটানো যেতে পারে। তাতে শুধু টালি রপ্তানী করে বছরে শত কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলে উদ্যোক্তারা জানান।
খুলনা এক সময় পাটনির্ভর অর্থনীতির চালিকা শক্তি ছিল। পাট শিল্প এবং এই শিল্পের সহযোগী শিল্পের উপর ভিত্তি করেই এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ভিত্তি গড়ে উঠেছিল। কিন’ কালের বিবর্তনে সরকারের যুযোপযোগী পরিকল্পনার অভাবে এবং রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্পে লুটপাটের কারণে একে একে এই অঞ্চলের পাটকলগুলির বেশীর ভাগই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে করে খুলনার পাটনির্ভর অর্থনীতির ধ্বস নেমে আসে।
পাটশিল্পের সাথে জড়িত সূত্র জানায়, বর্তমানে এমন অবস্থা হয়ে পড়েছে যে, পাট শিল্পকে এখন এ অঞ্চলের মানুষের কাছে ্‌একটি ভঙ্গুর অর্থনীতির চালক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ অন্যান্য দেশে পাট শিল্পের বাজার ক্রমেই চাঙ্গা হয়ে উঠছে। পাটের চাহিদা বিশ্বব্যাপী দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সূত্র জানায়, পাট শিল্পের এই করুণ পরিণতির পর এখন এই অঞ্চলের অর্থনীতির অসি-ত্ব ধরে রাখতে হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পের প্রসারের দিকে নজর দেওয়া অপরিহার্য্য হয়ে দাড়িয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যেমন বিসিক, বিনিয়োগ বোর্ড, ব্যাংকসহ স’ানীয় শিল্প ও বণিক সমিতির সম্মিলিত ও সমন্বিত উদ্যোগই এ অঞ্চলের পতিত অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
খুলনায় যেসব শিল্পের সম্ভাবনা উজ্জল সেসব শিল্পের বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করারও পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে।
এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পসহ কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠায় বিসিক সহ অন্যান্যদের মাধ্যমে উদ্যোক্তা বাছাই করে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে শিল্প স্থাপনে উদ্যোগ নিতে হবে। তবে তার পূর্বে অবহেলিত খুলনাঞ্চলের শিল্প কলকারখানাকে লাভজনক অবস্থায় আনতে এবং উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে অবশ্য সার্বিকভাবে এ অঞ্চলে শিল্প সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদসহ অন্যান্য কাঁচামাল প্রাপ্তির উপর ভিত্তি করে শিল্প স’াপনে বিনিয়োগ বোর্ড উদ্যোগ নিতে পারে। তাতে ব্যাংকের অলস অর্থ শিলেপ বিনিয়োগ ও ব্যাংকগুলোকে সরকারী নির্দেশসহ উৎসাহিত করারও পদক্ষেপ প্রয়োজন। উদ্যোক্তারা বলছেন, বর্তমান সরকারের শিল্পখাতকে প্রসারিত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। এখন প্রয়োজন দ্রুত বাস-বমুখী পদক্ষেপ গ্রহনের। তবেই খুলনার মৃত শিল্পখাত পুনুরুজ্জীবিত হবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post