অযত্নে নষ্ট হচ্ছে দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরীর শত কোটি টাকার সম্পদ!

 

বি. এম. রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো:

‘ফ্রেম ফ্লিম শাখার দরজা-জানালা কবেই ভেঙে পড়েছে। ম্যাচের কাঠি তৈরির সারি সারি অটোমেটিক মেশিনে ধরেছে মরিচা। ক্ষয়ে গেছে ম্যাচ বাক্স তৈরির যন্ত্রাংশ, বয়লার মেশিন। পাওয়ার হাউস কক্ষ, বিদ্যুৎ-ডিজেল সরবরাহ ব্যবস’া নষ্ট হয়ে গেছে। মাটিতে ধসে পড়েছে শ্রমিক ক্যান্টিন ও প্যাকিং শাখার মেঝে।’

দীর্ঘ ৬ বছর সময় ধরে বন্ধ থাকায় খুলনার ঐতিহ্যবাহী দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরী এখন ধ্বংসস-ুপে রূপ নিয়েছে। সরকারের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে ইজারা নেয়া ভাইয়া গ্রুপ সরকার বা শ্রমিকদের সাথে কোন ধরণের আলোচনা ছাড়াই ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। পরে ওই বছরের ১৮ আগস্ট মিলটি বন্ধ করে দিয়ে সকল শ্রমিক-কর্মচারীদের টারমিনেট করে। এরপর থেকে বহু আন্দোলন ও প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও মিলটি চালু করা যায়নি। সমপ্রতি সরেজমিনে মিলটিতে গিয়ে চারপাশে ধ্বংসের ছাপ দেখা যায়। ম্যাচ উৎপাদনের এ-ওয়ান, এ-টু, বি-ওয়ান, বি-টু শাখা, কাঠ কেটে ম্যাচের কাঠি তৈরি ও তাতে বারূদ লাগানোর ডিপিন শাখা, বয়লার মেশিন, প্যাকিং শাখা ভেঙেচুরে একাকার হয়ে গেছে। কোথাও আগাছা জন্মেছে কোমর অবধি। দাদা ম্যাচের জন্য ব্যবহৃত গাড়িগুলো টিন সেডেই নষ্ট হচ্ছে। সীমানা প্রচীরের ইট খুলে নেয়া ও মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার।

দাদা ম্যাচ ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের শ্রমিক নেতারা বলেন, বছরের পর বছর ধরে ফ্যাক্টরীর ৭৫০ জন শ্রমিক-কর্মচারী অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর দিন যাপন করছে। এর মধ্যে ৩০/৩২ জন শ্রমিক বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছে। গত ২০১০ সালের ১৮ আগস্ট মালিক পক্ষ রাতের আঁধারে লাভজনক প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়। দীর্ঘ আন্দোলনের পর ২০১১ সালের ৫ মার্চ খুলনার জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্যাক্টরীটি বিসিআইসি’র মাধ্যমে পুনঃ চালু করার আশ্বাস দেন। এ লক্ষ্যে ২০১১ সালের ২৩ মার্চ শিল্প মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিক আদেশে খুলনা জেলা প্রশাসন ফ্যাক্টরীটির স’াবর-অস’াবর সম্পত্তি বুঝে নেয়। কিন’ এরপর দীর্ঘদিনেও আর কোন অগ্রগতি হয়নি। এ বছর মিলের সিবিএ সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দিলখোশ মিয়া অসুস’তার কারণে মারা গেছেন। অনেক শ্রমিক অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন বলে অভিযোগ শ্রমিকদের।

জানা গেছে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মিলটি চালুর উদ্যোগ ব্যাহত করতে মাঠে নামে ইজারা গ্রহীতা প্রতিষ্ঠান ভাইয়া গ্রুপ। তাদের না জানিয়ে সরকার ফ্যাক্টরীটি নিজ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে অভিযোগ করে ২০১১ সালের ২৯ মার্চ হাইকোর্টে একটি রীট দাখিল করেন। শুনানী শেষে উচ্চ আদালত ১৫ মে রীটটি খারিজ করে দেয়। পরবর্তীতে তারা আবার এ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে আপিল করে। ১১ আগস্ট আদালত ভাইয়া গ্রুপের আপিল খারিজ করে দেন। কিন’ রায়ের পর সরকারিভাবে ফ্যাক্টরীটি পুনরায় চালু নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও শিল্প মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক চিঠি চালাচালি হলেও কার্যত কোন ফল হয়নি। মূলত রীট করার পর থেকে মিলটি চালুর ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগে ভাটা পড়ে।

দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরীর ফ্রেম ফ্লিম সেকশনের সুপারভাইজার আঃ আজিজ বলেন, দেখতে দেখতে মিল বন্ধের পাঁচটি বছর কেটে গেল। কত আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। কোন লাভ হয়নি। সরকার প্রতিশ্র“তি দিলেও মিলটি আজও চালু হয়নি। কবে চালু হবে সে বিষয়েও সঠিকভাবে কেউ কিছু জানাতে পারছে না। আমাদের বকেয়া পাওনাও পরিশোধ করা হচ্ছে না।

Post a Comment

Previous Post Next Post