দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক

kbdnews ডেস্ক : সরকারের নানামুখী উদ্যোগে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশে ব্যক্তি খাত ও বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাপক হারে বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ব্যক্তি খাত ও বিদেশি বিনিয়োগ একসঙ্গে বাড়লে বাড়বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থান। আর নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে ব্যক্তি খাত উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্প পরিচালনায় আরো ১৩ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দেবে বিশ্বব্যাংক।
দশমিক ২৫ শতাংশ হার সুদে এ ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির পরিচালনা পরিষদের সভায় এ ঋণপ্রস্তাব সমপ্রতি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাড়তি এ ঋণ সহায়তা প্রকল্পের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। এতে আগামী ১৫ বছরে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সরকারি লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে বলেও মনে করেন বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন কারখানা থেকে উৎপাদিত পণ্য রফতানি করে কমপক্ষে ৪০ বিলিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে ৪৬টির অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়ে সেগুলোর নির্মাণকাজের উদ্বোধনও করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত তিন বছরে ব্যক্তি খাত উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ (বিএইচটিপিএ) ১৬টি অর্থনৈতিক জোন ও হাইটেক পার্কের অনুমোদন দিয়েছে। ইতোমধ্যেই ৩৩টি এলাকা নির্বাচন করে সম্ভাব্যতা যাচাই করে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব এলাকায় নতুন করে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা হলে এবং তা শতভাগ কার্যকর করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চেহারার আরও পরিবর্তন হবে। বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। এতে সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র। যদিও সরকার প্রথম পর্যায়ে ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। তিনি জানিয়েছেন, চলতি বছরই বিশ্বব্যাংক প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।

জানা গেছে, বহুজাতিক দাতাসংস্থা বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ-প্রতিষ্ঠান আইএফসি ও যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ডিএফআইডির সঙ্গে বাংলাদেরে অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে। এ তিন সংস্থার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ব্যক্তি খাত উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যেই সাড়ে পাঁচ হাজার নতুন কর্ম সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর দেশের ২৬ থেকে ২৮ লাখ মানুষ কর্মবাজারে আসছে। সরকার তাদের সবার কর্মসংস্থানের কথাই ভাবছে। ফলে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাধ্যমে দেশের বেকার সমস্যার সমাধানও হবে খুব সহজেই, যা দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

বিশ্বব্যাংক অফিস আরও জানিয়েছে, বেজা বিপুল সংখ্যক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করবে। ইতোমধ্যেই ব্যক্তি খাতেও ১১টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) আওতায় নির্মাণ করা হবে মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চল। মিরেরসরাই শ্রীহট্টসহ বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের দরপত্রের প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যেই নতুন বেজা আইন অনুমোদন পেয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার নীতিমালাও প্রকাশ করা হয়েছে। বেজা কর্তৃপক্ষ মনে করে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো দেশের জিডিপিতে অন্তত ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়াবে।

ব্যক্তি খাত উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) গ্রিন জোন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। এর আওতায় চট্টগ্রাম ইপিজেডে সৌর উৎস থেকে আলো সরবরাহ করা হবে। প্রতিষ্ঠা করা হবে একটি পরিবেশ গ্রন্থাগার। এছাড়া আইএসও ১৪০০১ মানের ২১টি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে। প্রকল্পের সুফলে বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের সময়কাল আট দিনে নেমে এসেছে। এর আগে একটি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনে গড়ে ৪৪ দিন সময় লাগত। বেপজা নিবন্ধন, রফতানি, আমদানির লাইসেন্স, কাস্টম ক্লিয়ারেন্স ও অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ওয়ানস্টপ উইন্ডো চালু করেছে।

সমপ্রতি বিশ্বব্যাংকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। (বিএইচটিপিএ) পিপিপি খাতে আরও দুটি হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠার লাইসেন্স দিয়েছে। ব্যক্তি খাতে অনুমোদন পেয়েছে সাতটি হাইকেট পার্ক। এর বাইরে পিপিপি খাতে আরও দুটি হাইটেক পার্ক অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সরকারের এ সংস্থাটি স্কিল এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় হাজারো মানুষের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। ১১ হাজার ৪৫৭ কর্মী শিল্প-সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষণ ও সার্টিফিকেট নিয়েছেন। আইএসও ৯০০০ মানে উন্নীত হয়েছে ৫২টি শিল্প প্রতিষ্ঠান।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বলেন, বিশ্বব্যাংক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে চেয়েছে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সম্মতি দিয়েছি বলেই তারা এ খাতে সহায়তা করেছে। এ কারণেই ব্যক্তি খাত উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্প পরিচালনায় আরও ১৩ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির পরিচালনা পরিষদের সভায় এ ঋণপ্রস্তাব সমপ্রতি অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলেও জেনেছি। বাড়তি এ ঋণ সহায়তা প্রকল্পের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

Post a Comment

Previous Post Next Post