৩ বছরে নির্মিত হবে ১৩ হাজার সেতু-কালভার্ট

স্টাফ রিপোর্টার :  আমূল পাল্টে যাচ্ছে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা-কৃষির উন্নয়ন ও দুর্যোগ ঝুঁকি থেকে রক্ষায় আগামী ৩ বছরে সারাদেশে ১৩ হাজার সেতু-কালভার্ট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে একটি প্রকল্পের আওতায় এর নির্মাণ কাজ শুরু করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর। এটি গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের রেকর্ড। কারণ গত ৩ যুগে আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সারাদেশে ১৮ হাজার সেতু-কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর (ডিডিএম) সূত্র জানায়, গ্রামীণ রাস্তায় কম-বেশি ১৫মিটার দৈঘ্র্যের সেতু-কালভার্ট নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ৩ হাজার ৬৮৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বরাদ্দের এ প্রকল্পটি একনেকে পাস হয়েছে চলতি বছরের ১ মার্চ। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৩ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের আওতায় ১২ হাজার ৯৯৩টি (১ লাখ ২৯ হাজার ৯২৪ মিটার) সেতু-কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। ইতিমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়েছে। চলতি অর্থবছরে ৪৮৯ উপজেলায় ১ হাজার ২৯৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ হাজার ৮০৫টি (৪৭ হাজার ৫৪২মিটার) সেতু-কালভার্ট নির্মাণ কাজ চলছে। সম্পূর্ণ সরকারি (জিওবি) অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।

সূত্র আরো জানায়, দেশের ৬৪টি জেলার সব উপজেলায় ১৯৮২-৮৩ অর্থবছর থেকে ২০১৫-১৬ সাল পর্যন্ত ১৮ হাজার ২৩২টি সেতু-কালভার্ট (১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৫৯ মিটার) নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৩৮৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। পাশাপাশি ২০০০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখ ৯২ হাজার ৩৭৫ কিলোমিটার মাটির রাস্তা নির্মাণ-সংস্কার করা হয়েছে। এতে ছোট বড় ১ লাখ ২২টি অংশে পানি নিষ্কাশন ও নৌ চলাচলের জন্য গ্যাপ রাখা হয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব গ্যাপে সেতু-কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রকল্পের আওতায় সরকারের তহবিল থেকে এসব অবকাঠামো বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গ্রামীণ এলাকার রাস্তার গ্যাপে সেতু-কালভার্ট নির্মাণ করায় জলাবদ্ধতা নিরসনের মাধ্যমে দুর্যোগজনিত ঝুঁকি কমে যাচ্ছে। স্থানীয় হাট-বাজার, গ্রোথসেন্টার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ইউনিয়ন পরিষদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হচ্ছে। পাশাপাশি সহজ হচ্ছে কৃষি উপকরণ পরিবহণ ও বাজারজাত করা। এসব অবকাঠামোগত উন্নয়নে আমূল পরিবর্তন ঘটছে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার। সুযোগ তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থানের। অর্থনীতিতে পড়ছে ইতিবাচক প্রভাব।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর (ডিডিএম) গ্রামীণ অর্থনীতিতে এই সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করে যাচ্ছে। গ্রামীণ জনপদ গড়ে তোলা হচ্ছে উন্নয়নের মডেল হিসেবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় স্থান নির্বাচন করে স্বচ্ছতার সঙ্গে দরপত্রের মাধ্যমে সেতু-কালভার্ট নির্মাণের কার্যাদেশ দেয়া হয়। কঠোরভাবে তদারক করা হয় প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের (পিআইও) প্রতি সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশনা রয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রিয়ভাবে সরেজমিনে প্রকল্প তদারক করেন ঊর্ধ্বর্তন কর্মকর্তারা।

গ্রামীণ রাস্তায় কম-বেশি ১৫ মিটার দৈঘ্র্যের সেতু-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কৃষিসহ এলাকার সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্ব বিবেচনা করে সেতু-কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটলেই এলাকার উন্নয়ন ঘটে। প্রকল্পের কাজ কঠোরভাবে মনিটর কতরা হয়।

এবিষয়ে দুযর্োগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক ও গ্রামীণ রাস্তায় কম-বেশি ১৫ মিটার দৈঘ্র্যের সেতু-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক রিয়াজ আহমেদ জানান, প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক ইউনিয়নে দুটি করে সেতু-কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। এছাড়া যেসব অঞ্চলে খালবিল, সাঁকো, জলাবদ্ধতা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-হাটবাজার রয়েছে সেখানে বিশেষভাবে সেতু-কলাভার্ট বরাদ্দ দেয়া হবে।

তিনি বলেন, এসব সেতু-কালভার্ট নির্মাণ হলে গ্রামীণ জনগণের বিদ্যমান সমস্যাগুলো দূর হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। যোগাযোগের কারণে নারী শিক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে। হাট-বাজার ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সহজে যেতে পারবেন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবেন এলাকার বাসিন্দারা। এমনকি আর্থিক সহায়ক হিসেবে কাজ করবে সেতু-কালভার্টগুলো।

Post a Comment

Previous Post Next Post