পদ্মা সেতুর উপর ভর করেই সচল হবে খুলনাঞ্চলের অর্থনীতির চাকা

সম্ভাবনাময়

 

বি. এম. রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরোআগামী ১০ বছর পদ্মা সেতু পশ্চাভূমির জেলাগুলির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যেই দক্ষিণের এই জেলাগুলিকে পদ্মার সর্বোচ্চ উৎপাদনশীলতার সুফল  গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। এ সময়ে নিম্ন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মানব উন্নয়নের নিগাড় থেকে  এ অঞ্চলটি বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টা চালাতে পারে এবং উন্নয়ন সম্ভাবনার ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন সূচনা করতে পারে।

আগামী ১০ বছরে পদ্মার পশ্চাৎভূমির সামষ্টিক উন্নয়নের সম্ভাব্য রোডম্যাপ বর্ণনা করতে গিয়ে সূত্র জানায়, এই সময়ের মধ্যেই খুলনায় অবকাঠামো খাতের অনেকগুলো মেগা প্রকল্প পদ্মাসেতুর উইং হিসেবে যোগ হবে। এর মধ্যে রয়েছে- রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র, খুলনায় পাইপ লাইনে গ্যাস সরবরাহ, খুলনা-মোংলা রেল লাইন, রূপসা নদীতে রেল সেতু, খানজাহান আলী বিমান বন্দর ও পায়রা সমুদ্র বন্দর। এছাড়াও মোংলা সমুদ্র বন্দরসহ আরও কিছু প্রকল্পের সমপ্রসারণ ও আধুনিকায় কার্যক্রম শেষ হবে। এই সিরিজ প্রকল্পগুলোর পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া যখন শেষ হবে তখনই মূলত খুলনা জ্বলে উঠবে।  খুলনার নতুন অর্থনীতির সূর্যোদয় কার্যত এই সময়কালেই শুরু হবে।

সূত্র বলছে, খুলনা অঞ্চল দ্বিতীয় ধাপে অর্থাৎ পরবর্তী ১০ বছর (২০২৬-২০৩৫)  ব্যপ্তিকালে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিল্প বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা উৎপাদনমুখি কর্মযজ্ঞে  হবে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে আদর্শ এবং উর্বর বিনিয়োগ ক্ষেত্র। কারণ হিসেবে সূত্রের যুক্তি হলোঃ  অর্থনৈতিক সুবিধা A‡š^l‡Yi যুগে দেশে দেশে রাজনৈতিক বিভেদ ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। অর্থনীতিই এখন আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এ কারণে প্রতিবেশী দেশসমূহ বিভিন্ন ফোরাম বা আঞ্চলিক সহযোগিতা জোট গ্রহণ করে আন্তঃদেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের মাধ্যমে নিজ নিজ দেশের  সমৃদ্ধি আদায়ে বেশী আগ্রহী। এমনি আন্তর্জাতিক বাতাবরণের প্রেক্ষাপটে খুলনা উপকূলীয় অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় গুরুতপূর্ণ। মোংলা সমুদ্র বন্দর এই গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ নেপাল ও ভুটান এই বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। ভারতের কাছেও মংলা বন্দর কৌশলগত কারণে আকর্ষণীয়। এছাড়াও এশিয়ান হাইওয়ের সাথে মোংলা বন্দরসহ পদ্মাসেতুর সংযুক্তির পরিকল্পনা খুলনা অঞ্চলকে আন্তর্জাতিক শিল্প ও অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠার জন্য সুযোগ তৈরী দিয়েছে। এ জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উচিত হবে, এ অঞ্চলের জন্য একটি নতুন দূরদৃষ্টি এবং দিক-নির্দেশনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা, যার উপর ভিত্তি করে আধুনিক খুলনা নির্মাণে একটি নতুন দিগন্তের  সূচনা করা যেতে  পারে। এ জন্য শুধু সৎ উদ্দেশ্যই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির।

উল্লেখ্য, তাবৎ দক্ষিণাঞ্চলের  ২-৩ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে  পদ্মাসেতুর সুফল ভোগ করবে।  আগামী ১০ বছরের টাইম ফ্রেমের মধ্যে এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর স্থানীয় অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। বিশেষ করে খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর, শরিয়তপুর, ফরিদপুর এবং মাদারীপুর জেলায় সরাসরি শিল্প বিনিয়োগের সুযোগ বেশী তৈরী হবে মোংলা বন্দরসহ অন্যান্য শিল্প সহায়ক অবকাঠামো এবং সেবা খাতের সরাসরি সুফল এবং সহজলভ্যতার কারণে। এছাড়াও উপকূলের অপরাপর জেলাগুলিও এই সুযোগের আওতায় আসবে- যদি বহির্মুখী ও অন্তর্মুখী বাণিজ্য কৌশল যথাযথভাবে এই সময়ের মধ্যে প্রয়োগ করা যায়। সূত্র বলছে, উন্নয়নের চূড়ান্ত অভিষ্ঠ লক্ষ্য হচ্ছে- মানব সার্মথ্য নির্মাণ এবং মানব সুযোগগুলিকে বড় করা, যা বাস্তবায়নাধীন পদ্মাসেতু করছে। এখন প্রয়োজন সুযোগগুলিকে কাজে লাগানো।

Post a Comment

Previous Post Next Post