ঐতিহ্য হারাতে বসছে ফুলতলার গামছা শিল্প

unnamed(1)(1)[1]বি. এম. রাকিব হাসান খুলনা: :ধীরে ধীরে ঐতিহ্য হারাতে বসছে ফুলতলার গামছা শিল্প। সুতা, রং, ময়দা, তুতে সহ প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বৃদ্ধি,সংশিস্নষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে খুব বেশি সহযোগিতা না পাওয়াসহ নানাবিধ কারণে কারিগরদের অন্য পেশা গ্রহণ এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে বিবিধ সমস্যা এর মূল কারণ বলে জানিয়েছেন এ পেশায় টিকে থাকা কারিগররা । এক সময় এখানকার প্রায় ৮’শ থেকে ১হাজার পরিবার গামছা শিল্পের সাথে জড়িত থাকলেও এখন মাত্র ১৪০ থেকে ১৫০টি পরিবার এ পেশায় টিকে আছে। উৎপাদনও হচ্ছে পূর্বের চেয়ে অনেক কম। ব্যবসা ছেড়ে পথে পথে ঘুরছে ৭ শতাধিক কারিগর। অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে এ পেশায় টিকে থাকা কারিগরদের। সংশিস্নষ্ট সূত্র এবং সরেজমিনে পরিদর্শনে জানা যায়, এক সময় এ অঞ্চলের গামছা খুলনাঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হত দেশের বড় বড় শহরগুলোতে। এমনকি বিদেশেও ছিল ফুলতলার গামছার ব্যাপক কদর। থখন ছিল এ অঞ্চলের গামছা শিল্পের কারিগরদের সোনালী দিন। ঐ সময় অন-ত ৮’শ থেকে ১ হাজার পরিবার এ পেশার সাথে জড়িত ছিল। উন্নত যন্ত্রপাতি, মজবুত রং ও টেকসই হওয়ার কারণে এখানকার গামছার কদর ছিল গোটা দেশব্যাপী। সময়ের বিবর্তনে ধীরে ধীরে এ শিল্পের ভাটা পড়ে বলে জানায় স’ানীয়রা। সূত্র জানায়, সুতা, রং, ময়দা ও তুতে সহ প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বৃদ্ধি, দক্ষ কারিগরদের অভাব ও বিভিন্ন ধরণের আমদানীকৃত পোশাকের ভিড়ে দক্ষিণ জনপদের ঐতিহ্যবাহী এ গামছার কদর ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে । সূত্র মতে, ৯০এর দশকের শুরম্নর দিকে ফুলতলার গামছা কারিগরদের ছিল সোনালি দিন । তখন তাঁত শিল্পের কারিগররা সূতা, রং সহ প্রয়োজনীয় উপকরণ পেত সরকারি ভাবে। এছাড়া প্রয়োজনানুজায়ী সরকারিভাবে লোন দেয়া হত। তখন উপকরনের মান ভালো হওয়াতে গামছাও হত মজবুত-টেকসই। খুচরা পাইকারি বাজারগুলোতে বিক্রিও হত দেদারছে । গামছা তৈরির কারিগর আসলাম বিশ্বাসসহ আরো অনেকেই জানান, তখন সপ্তাহে একেকটি কারখানা থেকে ১৫ থেকে ২০হাজার টাকা গামছা দেশের গুরম্নত্বপূর্ণ শহরগুলোতে বিক্রি হত। বর্তমানে ফুলতলায় মাত্র ১৪০ থেকে ১৫০টি পরিবার এ পেশা আগলে রেখেছে বলে জানা যায়। বাকি কারিগররা বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই ফুলতলার অলকা ও দামোদর গ্রামের বাসিন্দা। এ পেশার সাথে জড়িত সংশিস্নষ্ট অনেকেরই অভিমত, বর্তমানে এ পেশা যে অবস’ায় দাঁড়িয়েছে তাতে গামছা শিল্পের উপর নির্ভর করে সংসার চালানো দায়। গামছা শিল্পের সাথে জড়িত একাধিক কারিগর জানান, একসময় এ শিল্পের উপরই আমাদের জীবন জীবিকা নির্ভর করত। বর্তমানে আয় কম হওয়াতে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশা গ্রহণ করছে। গামছা শিল্পের কারিগর ৬২ বছর বয়সী আবেজান বেগমের কাছে জানতে চাইলে ফুলতলার তাঁত শিল্পের বর্তমান অবস’া সম্পর্কে তিনি এই প্রতিবেদক কে জানান, এ অঞ্চলে তাত শিল্পের অবস’া পূর্বের চেয়ে অনেক খারাপ। এ শিল্পের উপকরণের দাম যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে সারাদিনে তৈরী গামছার যে মূল্য দাড়ায় তা দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা যায় না। তিনি আরো জানান, আমার স্বামী এ পেশায় দীর্ঘদিন যাবৎ জড়িত ছিল। তাই স্বামীর স্মৃতিকে আগলে রাখার জন্য এখনও এ পেশায় জড়িয়ে আছি। দামোদর গ্রামের কারিগর আব্দুল ওহাব জানান, বর্তমানে একদিনে মাত্র ৫টি গামছা তৈরী করা গেলেও গামছার বাজার দর অনুযায়ী শেষ পর্যনত্ম লোকসানের ঘানি টানতে হয়। একই গ্রামের কারিগর হাসমত বিশ্বাস জানায়, ফুলতলার গামছা শিল্পের কদর একসময় সারাদেশ ব্যাপী ছিল। নানাবিধ সমস্যার কারণে সে ঐতিহ্য দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। ফুলতলা পাইকারি গামছা বাজারের বিক্রেতা রবিউল ইসলাম জানান,এখানে সপ্তাহে বুধ ও রবিবার গামছার হাট বসে ।পূর্বের তুলনায় গত কয়েক বছরে এ ব্যবসায় মন্দাভাব বিরাজ করছে । এখন হাটের দিন সর্বমোট ১০ থেকে ১২ থান গামছা বিক্রি হয়ে থাকে। ৭-৮ বছর আগে হাটের দিন ৪০ থেক ৫০ থান গামছা বিক্রি হত।
তাঁতবোর্ড অফিস খুলনার লিয়াজো অফিসার মিজানুর রহমানের কাছে খুলনার তাঁত শিল্পের বর্তমান পরিসি’তি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, সুতা, রং, ময়দাসহ প্রয়োজনীয় উপকণের মূল্য বৃদ্ধির কারনে এ শিল্পের কারিগরেরা দিন দিন অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন। খুলনায় এ শিল্পের ঐতিয্যকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তাঁতবোর্ড কোন পদড়্গেপ নিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে মিজানুর রহমান জানান , আমরা বর্তমানে ফুলতলার গামছা শিল্পের কারিগরদের তাঁত শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য জন প্রতি ২০ হাজার টাকা পর্যনত্ম লোন দিচ্ছি। এ অঞ্চলের বর্তমানে টিকে থাকা কারিগরদের মধ্যে আসর আলী বিশ্বাস, রহমত বিশ্বাস, হাসমত বিশ্বাস, বাবর আলী, আবেদা বেগম, হোসেন বিশ্বাস, হাফিজুর রহমান, নাহার, মান্নান, রহমত আলী, আব্দুল খালেক সহ আরও অনেকেই এই প্রতিবেদক কে জানান, বাংলাদেশের ঐতিহ্যের অপার নিদর্শন গামছা শিল্পকে খুলনাঞ্চলে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারকে তাঁত শিল্পের উপকরণের দাম কমানো এবং এ শিল্পে ঋণ প্রদান করা সহ এ শিল্পের কারিগরদের সার্বিক সহযোগিতায় সরকার এগিয়ে আসলে এখানকার হারিয়ে যাওয়া গামছা শিল্পের ঐতিহ্য ফিরে পাওয়া সম্ভব।

Post a Comment

Previous Post Next Post