সরকার বীমা খাতে পারিবারিক আধিপত্য ও পরিচালকদের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধের উদ্যোগ নিচ্ছে

bema।KBDNEWS.COM:  বিধিমালা অনুসারে একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তি বা তাদের কোনো প্রতিষ্ঠান নামে-বেনামে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার রাখতে পারবে না। আর কোনো বীমা কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক আইনের নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত শেয়ার সময়মতো ছেড়ে দিতে ব্যর্থ হলে সরকারই ওই শেয়ার ধারণ করবে। ইতিমধ্যে বীমাকারীর মূলধন ও শেয়ারধারণ বিধিমালা ২০১৬ শিরোনামে বিধিমালাটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আর ভেটিংয়ের পর শিগগিরই তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে। আইডিআরএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নতুন বিধিমালা অনুসারে একই পরিবারের কোনো ব্যক্তি অথবা কোম্পানি একক, বিধিমালা অনুসারে একই পরিবারের কোনো ব্যক্তি বা সদস্য অথবা কোম্পানি একক, যৌথ কিংবা উভয়ভাবে কোনো বীমা কোম্পানির ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবেন না। তাছাড়া উদ্যোক্তা-পরিচালকের শেয়ার কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধনের ২ শতাংশের নিচে হওয়া যাবে না। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত অনুসারে ঋণখেলাপি কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানি বীমাপ্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা-পরিচালক হতে পারবেন না। পাশাপাশি উদ্যোক্তা-পরিচালককে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের অর্থ পরিশোধের সময় এই শপথনামা বা ঘোষণাপত্র দিতে হবে- তিনি অন্য কোনো ব্যক্তির নমিনি হিসেবে বা অন্য কোনো ব্যক্তির নামে শেয়ার কিনছেন না অথবা এর আগে তিনি অন্য কোনো ব্যক্তির নমিনি হিসেবে কিংবা অন্য কারো নামে শেয়ার ধারণ করেননি। শপথনামা বা ঘোষণায় দেয়া তথ্য মিথ্যা প্রমাণ হলে ওই ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সমুদয় শেয়ার বাজেয়াপ্ত করা হবে।

সূত্র জানায়, নতুন বিধি কার্যকর হওয়ার আগে কোনো ব্যক্তি যদি নির্ধারিত শেয়ারের বেশি ধারণ করে থাকেন,তবে পরবর্তী ৩ বছরের মধ্যে ওই অতিরিক্ত শেয়ার পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য ব্যক্তি বা কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিতে হবে। আর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত শেয়ার বিক্রি করে দিতে না পারলে সরকারকে তা জানাতে হবে। পরে সরকার বা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত কোনো সংস্থা ওই শেয়ার কিনে নেবে।

সূত্র আরো জানায়, কয়েক বছর আগেও ১৯৩৮ সালের ইন্স্যুরেন্স অ্যাক্ট দ্বারা দেশের বীমা খাত পরিচালিত হতো। ওই আইনের আওতায় বীমা খাতের দেখভাল করতো বীমা অধিদপ্তর। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের পলিসি হোল্ডারদের স্বার্থরক্ষায় খুব বেশি ভূমিকা রাখার ক্ষমতা ছিল না। বরং বীমা কোম্পানির মালিকরা ব্যক্তিগত ও প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে অধিদপ্তরকে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করতো। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মহল থেকেই বীমা খাতের সংস্কার এবং নতুন আইন প্রণয়নের দাবি ওঠে। সেই প্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ৩ মার্চ বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন-২০১০ পাস হয় এবং একই বছরের ১৮ মার্চ আইনটি গেজেটভুক্ত হয়। আর তারও ৯ মাস পর গঠন হয় আইডিআরএ। আইডিআরএ ২০১১ সালের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বীমা খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর উদ্যোগ নেয়। সেই লক্ষ্যে বীমা খাতকে পরিবারকেন্দ্রিকতা থেকে বের করে আনার জন্য একের পর এক পদক্ষেপ নেয়া শুরু করে আইডিআরএ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- নিজ মালিকানাধীন অন্য প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসার বীমা নিজের বীমা কোম্পানিতে করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ এবং একই ব্যক্তির একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা।

এদিকে বীমা খাতের নতুন বিধিমালা সম্পর্কে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) চেয়ারম্যান শেখ কবীর হোসেন জানান, সরকার আইন করলে তা মানা হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ ওই আইন চূড়ান্ত করার আগে আরেকবার সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।

অন্যদিকে এই প্রসঙ্গে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা বলেন, আইন অনুযায়ী বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। বর্তমানে আইন ভেটিংয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করার পর তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে।– এফএনএস

Post a Comment

Previous Post Next Post