জনপ্রিয় হচ্ছে বায়োগ্যাস সাশ্রয় হচ্ছে জ্বালানির

KBDNEWS : মানুষের এক সময়ের অব্যবহৃত এসব উচ্ছিষ্ট দিয়েই এখন তৈরি হচ্ছে বায়োগ্যাস বা বিকল্প জ্বালানি। এ জ্বালানি ব্যবহার করে খুলনা মহানগরীতে একটি পরিবার প্রতি মাসে প্রায় ৫-৭ হাজার টাকা সাশ্রয় করছে। ক্রমান্বয়ে এ গ্যাসের জনপ্রিয়তাবৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে খুলনা জেলায় প্রায় ৫ শতাধিক বায়োগ্যাস প্লান্ট গড়ে উঠেছে।

বেসরকারি বেশকিছু সংস্থা এ প্লান্ট কিস্তির মাধ্যমে নির্মাণ করিয়ে জনগণের মধ্যে উদ্বুদ্ধ করেছে। একই সাথে সরকারি প্রতিষ্ঠানও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এসব দেখে শুনে অনেকেই রাজমিস্ত্রিদের মাধ্যমে এ প্লান্ট তৈরি করছে। সরকারি মালিকানাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইউকল)’র একটি সূত্র জানান, জাতীয় গার্হস্থ্য বায়োগ্যাস ও জৈব সার কর্মসূচির আওতায় ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশ বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি শুরু হয়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৫ সহস্রাধিক প্লান্ট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ৩ হাজার ৮১৮ প্লান্ট রয়েছে। যার মধ্যে শুধুমাত্র খুলনা জেলায় বায়োগ্যাস প্লান্ট সংখ্যা ৩৮৪টি। তবে বেসরকারি পর্যায়ে এর সংখ্যা ৫ শতাধিক। প্রতিনিয়ত এর পরিমাণ বাড়ছে। এই সূত্রটি জানান, পচনশীল যে কোনো জৈব পদার্থ যেমন, গরুর গোবর, মুরগির বিষ্ঠা এবং মানুষের মলমূত্র বায়ুশূন্য অবস্থায় রাখলে সেখান থেকে উৎপন্ন হওয়া গ্যাসই বায়োগ্যাস বা বিকল্প ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিসেবে পরিচিত। এ গ্যাস জ্বালানি হিসেবে খুবই উপযোগী। এতে কোনো গন্ধ নেই, ধোঁয়া হয় না, হাঁড়ি-পাতিল ও রান্নাঘরে কালি পড়ে না, কেরোসিন, কাঠ বা খড়কুটা লাগে না। ফলে জ্বালানি খরচ বেঁচে যায়। এছাড়া এ গ্যাস দিয়ে গ্যাস বাতিও জ্বালানো যায়।

সূত্র মতে, খুলনায় পাইপ লাইনে গ্যাস না থাকা এবং গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় খুলনা মহানগরীতে বায়োগ্যাস জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেকেই বাড়িতে গ্যাসের প্লান্ট তৈরি করে রান্নার জ্বালানির পাশাপাশি প্রতিবেশীদেরও লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করে বাড়তি অর্থ আয় করছে।

এমনই একজন খুলনা নগরীর বয়রা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী শেখ মাহফুজুর রহমান টিটো। তিনি গত দুই বছর যাবৎ বায়োগ্যাস ব্যবহার করে জ্বালানি সাশ্রয় করছেন। মো. শাহ আলম বলেন, মূলত তিনি নিজ বাড়ির আঙ্গীনায় গরুর খামার করছেন ২০০৮ সাল থেকে। বর্তমানে খামারে ১২টি গরু রয়েছে। ২০০৯ সালের দিকে তিনি প্রথম বায়োগ্যাসের কথা জানতে পারেন।

তখন ইডকলের নির্মাণ সহযোগী ও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ শক্তির মাধ্যমে তিনি বাড়িতে গ্যাস প্লান্ট নির্মাণ করেন। ৪ দশমিক ৮ কিউবিক মিটার সাইজের এ পান্টের নির্মাণ ব্যয় হয়েছে মোট ৪৪ হাজার ৪৫৩ টাকা। এর মধ্যে তিনি ডাউন পেমেন্ট করেছেন মাত্র ৫ হাজার ৩১৮ টাকা। বাকি টাকা প্রতি মাসে কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করতে হচ্ছে। এর মধ্যে ইডকল থেকে তিনি ৯ হাজার টাকা ভর্তুকি পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, বায়োগ্যাস উৎপাদনের মাধ্যমে তিনি বর্তমানে ৬টি চুলা জ্বালাতে পারছেন। বাড়ির যাবতীয় রান্না এবং গরুর খাদ্য জ্বালানির কাজও এই গ্যাসে চলছে। ফলে প্রতি মাসে তার ৬টি গ্যাস সিলিন্ডার কেনার অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। এছাড়া গ্যাস উৎপাদনের পর থাকা বর্জ্য (বায়োগ্যাস রেসিডিউ বা মস্নারি) বিক্রি করেও তার গরুর খাবারের খরচ যোগান হচ্ছে। এভাবে মাসে তার ৬ হাজার টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post